শরীয়তপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের নতুন ভবন উদ্বোধন করা হয় ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর। তবে প্রায় আড়াই বছর হতে চললেও সরকারি এ অফিসে কর্মদিবসে পতাকা উত্তোলন করা হয় না। অথচ পতাকা বিধিমালা ১৯৭২ অনুযায়ী, সরকারি দপ্তরগুলোসহ সব ভবনে কর্মদিবসে পতাকা উত্তোলন করতে হবে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা।
সোমবার (২৯ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শরীয়তপুর পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দেখা যায়, জাতীয় পতাকার স্ট্যান্ড খালি দাঁড়িয়ে রয়েছে।
সেখানে কথা হয় পাসপোর্ট অফিসের নৈশপ্রহরী জাকির হোসেনের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভবন উদ্বোধনের পর থেকে দুই বছর ধরে পতাকা উত্তোলন করা হয় না এই অফিসে।’ কেন উত্তোলন করা হয় না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনি স্যারের রুমে আসুন। স্যারের সঙ্গে কথা বলুন। আমি পতাকা উত্তোলন করার দায়িত্বে নেই।’
ভেদরগঞ্জ উপজেলা থেকে সেবা নিতে আসা মাহাবুব তালুকদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি এত অফিসে যাই, ঘুরি; সবখানেই জাতীয় পতাকা টাঙানো থাকে। অফিস খোলার দিনগুলোতে সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা টাঙানো হয়। তবে এই পাসপোর্ট অফিসে পতাকা উড়তে দেখি না।
দেশের ৩০ লাখ শহীদের বিনিময়ে পাওয়া পতাকা উত্তোলন করতে সমস্যা কী তাদের?’
এ বিষয়ে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস শরীয়তপুরের সহকারী পরিচালক নাজমুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভাই, কোনো দিবস ছাড়া আমাদের পতাকা উত্তোলনের বিধি নেই। সরকারি কর্মদিবসগুলোতে জেলা প্রশাসক, জজ কোর্ট, পুলিশ সুপার অফিসে পতাকা উত্তোলন করার নিয়ম রয়েছে। যদি অন্য কোনো জেলায় পাসপোর্ট অফিসে পতাকা উত্তোলন দেখাতে পারেন তাহলে আমিও পতাকা উত্তোলন করতাম। দয়া করে আপনি পতাকা আইন দেখতে পারেন। শুধু পাসপোর্ট অফিস নয়, শরীয়তপুরের গণপূর্ত অফিসেও পতাকা উত্তোলন করা হয় না।’
তবে গণপূর্ত অধিদপ্তরে গিয়ে দেখা যায়, জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মহিবুর রহমান পিইঞ্চ বলেন, ‘আমার অফিসে নিয়মিত পতাকা উত্তোলন করা হয়। এর ব্যতিক্রম হয়নি কখনো।’
সরকারি অফিসে পতাকা উত্তোলন না করায় শরীয়তপুরের যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ তালুকদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘কর্মদিবসগুলোতে দেশের সব সরকারি দপ্তরে পতাকা উত্তোলন বাধ্যতামূলক। কিন্তু পাসপোর্ট অফিসে উদ্বোধনের দুই বছর ধরে পতাকা উত্তোলন করা হয় না বিষয়টি গুরুতর, রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধ। পাসপোর্ট অফিস কি বাংলাদেশের বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠান নাকি? এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান বলেন, ‘আসলে বিষয়টি আমার জানা নেই। এটি গুরুতর ভুল। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। পতাকা আইন মান্য করা না হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’