গত ৯ মে সামরিক স্থাপনায় হামলা ইস্যুতে একের পর এক পদত্যাগ করছেন ইমরান খানের দল পিটিআই’র শীর্ষ নেতারা। অনেকেই দলত্যাগ করেছেন, চিরতরে রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন কেউ কেউ। তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা রয়েছেন গ্রেফতার আতঙ্কে। কয়েক হাজার পিটিআই কর্মীকে এরই মধ্যে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আর এমন পরিস্থিতির মধ্যেই নিজ বাড়িতে ‘পুরোপুরি সংযোগবিচ্ছিন্ন’ হয়ে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। এ অবস্থায় সরকার ও রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দ্রুত আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার (২৬ মে) ইউটিউব লাইভে এক ভিডিওবার্তায় ইমরান খান বলেন, আমি সংলাপের আহ্বান জানাই। কারণ বর্তমানে যা হচ্ছে তা কোনো সমাধান নয়।
লাহোরে জামান পার্কের বাসভবন থেকে তিনি বলেন, দেশ আসন্ন বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি চূড়ায় পৌঁছানোর কাছাকাছি। কিন্তু ক্ষমতাসীন শাসকরা তা নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়। কারণ তারা লুট করা সম্পদ বিদেশে লুকিয়ে রেখেছে।
পৃথকভাবে, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ফ্রান্স ২৪কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইমরান খান দাবি করেন, বাড়িতে তাকে পুরোপুরি ‘সংযোগবিচ্ছিন্ন’ করে রাখা হয়েছে। দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে তাকে যোগাযোগ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, পিটিআইর সমর্থকরা হয় গ্রেফতার হয়েছেন, নাহয় আত্মগোপনে চলে গেছেন।
দু’বার হত্যাচেষ্টার শিকার হওয়ার পর এখনো নিজের প্রাণশঙ্কা করছেন বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। ভিডিওতে ইমরান খান জোর দিয়ে বলেন, সংলাপের আহ্বানকে তার দুর্বলতা মনে করা উচিত হবে না।
ক্ষমতাসীনদের সতর্ক করে ইমরান খান বলেন, তাদের সংযমী হওয়া উচিত। কারণ পিটিআইকে চূর্ণ করার প্রচেষ্টা পাকিস্তানকে ধ্বংস করে দিতে পারে। তিনি বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলই শাসকদের কাছ থেকে এমন বর্বর আচরণ প্রত্যক্ষ করেনি।
গত বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ সংসদ সদস্যদের (এমপি) সঙ্গে জুম কলে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেওয়ার কথা ছিল পিটিআই চেয়ারম্যানের। কিন্তু পাকিস্তান সরকারের বাধায় তা সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন ব্রিটিশ এমপিরা।
ওইদিন ২০ জন ব্রিটিশ এমপি ও নেতার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেওয়ার কথা ছিল ইমরান খানের। কিন্তু ভিডিও কল শুরু হওয়ার আগেই তার বাড়ির ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয় পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ। টানা দেড় ঘণ্টা ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
হাইন্ডবার্ন এবং হাসলিংডেনের এমপি সারা ব্রিটক্লিফ সেই জুম মিটিং রুমের স্ক্রিনশট টুইটারে শেয়ার করে বলেছেন, ইমরান খান এই মিটিংয়ে যোগ দিতে প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু কোনো ধরনের আগাম ঘোষণা ছাড়াই পাকিস্তানের টেলিকম কর্তৃপক্ষ তার বাড়ির ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয়।
এদিকে, ক্ষমতাসীন দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) প্রধান সংগঠক মরিয়ম নওয়াজ দাবি করেছেন, ইমরান খানের সময় শেষ। তার দল আর কখনোই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না।
ইমরান খান পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে সামরিক স্থাপনায় হামলার ‘মাস্টারমাইন্ড’ ছিলেন অভিযোগ করে মরিয়ম বলেন, আপনার (ইমরান) সময় শেষ। পরবর্তী নির্বাচনে আর কেউই পিটিআই’র টিকিট পাওয়ার চেষ্টা করবে না। ইমরান খান বা তার ‘সুবিধাদাতাদের’ কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সরকারদলীয় এ নেতা।