প্রত্যেক বছর ঈদুল আজহায় দেশজুড়ে কোরবানিযোগ্য পশুর চাহিদা থাকে ব্যাপক। ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে প্রত্যেক বছর রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় পশুর হাট বসলেও অনেকেই ফার্ম থেকে কোরবানিযোগ্য পশু কিনতে পছন্দ করেন। এসব ফার্মে অনেক ক্রেতা আগেই কোরবানির পশু পছন্দ করে অগ্রিম টাকা পরিশোধ করে বুকিং দিয়ে রাখেন। তাই ঈদুল আজহার কয়েক মাস আগে থেকেই ব্যস্ততা বেড়ে যায় খামার সংশ্লিষ্টদের।
গত কয়েক বছরে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে অসংখ্য পশুর খামার। এসব খামারে মূলত ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করেই পশু লালন-পালন করা হয়। তবে বছরের অন্যান্য সময়ও এসব খামার থেকে পশু কিনতে পারেন ক্রেতারা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছোট গরু সংগ্রহ করে এসব খামারে লালন-পালন করে ঈদের সময় বিক্রি করা হয়।
ঢাকার ফার্মগুলোর মধ্যে মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধে অবস্থিত ‘সাদেক এগ্রো’ ফার্মটি রাজধানীবাসীর কাছে বেশ সুপরিচিত।
সম্প্রতি সাদেক এগ্রো ঘুরে দেখা যায়, পশু পালনের জন্য ফার্মে থাকা প্রতিটি স্লট পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। অতিরিক্ত পশুগুলো রাস্তাসহ বিভিন্ন জায়গায় রাখা হয়েছে। ফার্মে বেড়েছে কর্মীর সংখ্যাও। পশুদের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পর করছেন তারা। কর্মীদের কেউ পশুগুলোকে খাবার দিচ্ছেন, গোসল করাচ্ছেন, কেউ ফ্লোর পরিষ্কার করছেন। আবার কেউ কেউ ফার্মে আসা ট্রাক থেকে সবুজ ঘাস নামাচ্ছেন। সব মিলিয়ে বিশাল এক কর্মযজ্ঞ চলছে ফার্মটিতে।
ঈদের একমাস বাকি থাকলেও এরই মধ্যে ক্রেতাদের আনাগোনা দেখা গেছে ফার্মটিতে। ক্রেতাদের কেউ আসছেন পশু দেখতে, আবার কেউ আসছেন পছন্দ করে বুকিং দিতে। পশুর ওজন সঠিকভাবে ক্রেতাদের মেপে দিতে ফার্মটিতে আছে ‘লাইভ ওয়েট স্কেল’। ফলে ক্রেতারা পশু কিনে সন্তুষ্ট হচ্ছেন।
পশু দেখতে ফার্মে আসা ফয়সাল আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম অনেক বেশি। কারণ, বাজারের সত্যিকার অর্থে গো-খাদ্যের দাম বেড়েছে। দাম বৃদ্ধির জন্য ফার্মের মালিকদের দোষ দিয়ে লাভ নেই।
তিনি আরও বলেন, ভারত পাকিস্তানে গরুর মাংসের দাম অত বেশি না। কারণ সেখানে গো-খাদ্যের দাম অনেক কম। আমাদের দেশে ফার্মের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। সরকার খাদ্যের দাম কমালে দেশের মানুষও কম দামে গরুর মাংস খেতে পারবে।
ক্রেতা মো. শওকত ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি নূরজাহান রোড থেকে এসেছি। সাদেক এগ্রোর কথা আগে থেকেই শুনেছি। হঠাৎ করেই এখানে আসা। সামনে যেহেতু কোরবানির ঈদ, চোখের দেখা দেখে গেলাম। ঈদের আগে আবারও আসব। তখন হয়ত একটি গরু কিনতে পারি।
সাদেক এগ্রোর ইনচার্জ শাহারিয়ার পরশ ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও আমাদের প্রস্তুতি ভালো। আমাদের কালেকশনের সব পশু ইতিমধ্যে এসে পড়েছে। আমরা চেষ্টা করি ক্রেতা সাধারণের চাহিদা মতো পশুর যোগান দিতে। ব্রাহমা, ইন্দো ব্রাজিল, হোলস্টাইন, দেশাল, শাহীওয়ালসহ আরও কয়েকটি জাতের গরু আছে। মহিষ আছে ৪ ধরনের। ছাগল আছে বেশ কয়েকটি প্রজাতির। এর বাইরে ৪ জাতের দুম্বাসহ উটও আছে আমাদের খামারে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছে যদি কোন গরু ভালো লেগে থাকে সেটা আমরা প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকের কাছে থাকলেও নিয়ে আসি। বলা যায়, পুরো বাংলাদেশ থেকেই আমরা কালেকশন করি। সারা বছরই এই কালেকশন চলতে থাকে।
তিনি বলেন, এ বছর আমরা ৩ হাজার পশু বিক্রির টার্গেট নিয়েছি। এ বছরের গরু গত বছর কোরবানি ঈদের পর থেকে বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। তখন আমাদের ২০-৩০টি গরু বুকিং দিয়ে রেখেছিলেন ক্রেতারা। এখন ক্রেতারা আসছেন, দেখছেন। আশা করছি, আগামী মাসের শুরুর দিকেই আমাদের এখানে ক্রেতারা কিনতে চলে আসবেন।
এবার ৪০০ কেজির মধ্যে যেসব গরু থাকবে সেগুলো ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করব। এর উপরে ওজনের যেসব গরু থাকবে সেগুলোর বিষয়ে ম্যানেজমেন্ট সিদ্ধান্ত নেবে বলেও জানান তিনি।
রাজধানী ঢাকাসহ আশেপাশের এলাকায় অর্ধশত গরুর খামার রয়েছে। পশুর বাজারের পাশাপাশি কোরবানির ঈদে এসব খামারে ক্রেতাদের ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে ঈদের আগের রাতে তো কথাই নেই। মূলত যারা পশুর হাটের ঝামেলা এড়াতে চান, তাদেরই বেশি দেখা মেলে এসব খামারে।