কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হল ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী ফাইজা মাহজাবিনের বিরুদ্ধে রিয়া দাস নামে নিজ দলেরই এক কর্মীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।
রোববার (২১ মে) হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই কর্মী। তবে ফাইজার দাবি, ওই কর্মী প্রাধ্যক্ষের নাম ভাঙ্গিয়ে হলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছিল। তাই তাকে ডেকে বুঝিয়েছেন তিনি। এ বিষয়টিকেই অতিরঞ্জন করা হচ্ছে।
অভিযোগপত্র পাওয়ার পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে হল প্রাধ্যক্ষ মো. সাহেদুর রহমান বলেন, আমি একটা অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে হল প্রশাসন বসে সিদ্ধান্ত নেবে।
রিয়া দাস একসময় ফাইজার অনুসারী ছিলেন। তবে এখন তিনি ২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেজা-ই-এলাহির অনুসারী। শনিবার ভর্তি পরীক্ষার্থীদেরকে সেবা দিতে আলাদা বুথ বসায় ছাত্রলীগের দু’টি পক্ষ। রিয়া হলের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে ফাইজাদের বুথে না বসে রেজা-ই-এলাহি পক্ষের বুথে বসেছিলেন। সে ঘটনাকে কেন্দ্র করেই উভয়ের মাঝে বাগবিতণ্ডা ঘটে।
লিখিত চিঠিতে রিয়া দাস অভিযোগ করেন, শনিবার সন্ধ্যায় তিনজন জুনিয়র শিক্ষার্থীকে নিয়ে হল থেকে বের হওয়ার সময় ফাইজা তাকে ২১৪ নম্বর কক্ষে টেনে নিয়ে যায়। এসময় তার গায়ে হাত তুলতে তুলতে ফাইজা বলেন, আমি তোকে হলে উঠাইছি, এই হলে আমার উপর কেউ কথা বলে না। আমার কথায় হল চলে, আমি এ হলের সভাপতি। এছাড়া ফাইজা তাকে আরও বিভিন্ন হুমকিধমকি দেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
ঢাকামেইলের প্রতিবেদককে রিয়া বলেন, জুনিয়রদেরকে নিয়ে সন্ধ্যায় চা খেতে বের হচ্ছিলাম। তখন ফাইজা আপু উনার রুমে যেতে বলে। রাজি না হওয়ায় একপর্যায়ে জোরপূর্বকভাবে আমাকে নিয়ে যায়। এসময় আমাকে আটকে তিনি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
তবে অভিযোগের বিষয়টি মিথ্যা দাবি করে ফাইজা মাহজাবিন বলেন, এরকম কোনো কিছুই ঘটেনি। হল প্রাধ্যক্ষ এক ক্যান্ডিডেটের (রেজা-ই-এলাহি) লোক দাবি করে সে হলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছিল। সে আমার ডিপার্টমেন্টের ছোট বোন হওয়ায় তাকে বুঝানোর চেষ্টা করেছি। এ বিষয়টিকেই অতিরঞ্জন করে উপস্থাপন করা হচ্ছে। বরং সে প্রাধ্যক্ষের নাম ভাঙ্গিয়ে হলের সিট নিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করছে।
এ ঘটনার একটি অডিও ক্লিপ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। যেখানে ফাইজা মেহজাবিনের সঙ্গে রিয়া দাসের উচ্চবাচ্য শোনা গেছে। সেখানে ফাইজা বলেন, আমি তোকে হলে উঠাইছি, তুই বলতে পারতি- আপু আমি এ গ্রুপে কাজ করব না, অন্য গ্রুপে কাজ করব। তাহলেই এটা সমাধান হয়ে যায়। আমার উঠানো (হলে) মেয়েগুলোকে নিয়ে অন্য বুথে (রেজাদের পক্ষের) বসার সাহস কী করে হলো।
এসময় রিয়া দাস বলেন, আপনি রেজা ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন, রেজা ভাই বলছে যতগুলো মেয়ে আছে, সবগুলো মেয়ে নিয়ে যেতে। তখন ফাইজা উচ্চস্বরে বলেন, কিসের সবগুলো মেয়ে, এটা আমার হল, এখানের সব মেয়েরা আমার।
এদিকে প্রাধ্যক্ষের নাম ভাঙ্গিয়ে সিটের রাজনীতি করার বিষয়ে ফাইজার দাবির প্রেক্ষিতে হলের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রেজা-ই-এলাহীর সঙ্গে শেখ হাসিনা হলের প্রাধ্যক্ষের ভালো সম্পর্ক রয়েছে দাবি করে জুনিয়র শিক্ষার্র্থীদেরকে তার গ্রুপের রাজনীতি করার জন্য প্ররোচনা দেন রিয়া দাস।
কয়েকজন অনাবাসিক শিক্ষার্থীকে উদ্দেশ্য করে রিয়া বলেন, হল প্রাধ্যক্ষ ওই ছাত্রনেতার (রেজা) লোক। তিনি সভাপতি হলে যারা হলের আবাসিকতা পায়নি, তাদেরকে ‘অ্যালোটমেন্ট’ করিয়ে দেওয়া হবে। ফেসবুক মেসেঞ্জারে এ সংক্রান্ত কয়েকটি চ্যাটের স্ক্রিনশটও প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
তবে বিষয়টি অস্বীকার করে রিয়া দাস বলেন, আমি এমন কোনো কথা বলিনি।
একই ভাষ্য রেজা-ই-এলাহীরও। তিনি বলেন, আমি কাউকে এরকম কোনো কথা বলিনি। সিট দেওয়ার এখতিয়ার আমাদের নেই। এটা হল প্রশাসনের।
তবে হল প্রাধ্যক্ষকে জড়িয়ে তার বিরুদ্ধে প্রচারকারীদের বিষয়ে তিনি ব্যবস্থা নিবেন কি না- জিজ্ঞেস করা হলে বিষয়টি এড়িয়ে যান রেজা-ই-এলাহী।
শেখ হাসিনা হলের প্রাধ্যক্ষ মো. সাহেদুর রহমান বলেন, আমাকে প্রভোস্ট হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছে। এখানে আমার ব্যক্তিগত কোনো ইস্যু নেই। হলের প্রত্যেকটা ছাত্রী আমার কাছে সমান। নিয়মের বাহিরে কাউকে সিট বরাদ্দ দেওয়া হয় না। যদি কেউ আমার নাম ব্যবহার করে থাকে, যতটুকু আইনে কভার করে, আমি ততটুকু ব্যবস্থা নেব।