গত ডিসেম্বর থেকে ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসা বিএনপি এখন থেকে এক দফা অর্থাৎ শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করবে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার (২০ মে) বিকেলে লালমনিরহাটে এক জনসভায় দেওয়া ভাষণে ফখরুল এই কথা বলেন। এদিন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদসহ দশ দফা দাবিতে লালমনিরহাট শহরের কালেক্টরেট মাঠে জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আর কোনো দশ দফা নয়, এখন একটাই দাবি- শেখ হাসিনার পদত্যাগ। সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে নতুন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে, তবেই বিএনপি নির্বাচনে যাবে। এই নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ভোটের ক্ষমতা নেই, গাইবান্ধায় সম্প্রতি নির্বাচনে তা প্রমাণিত হয়েছে।’
গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ থেকে ১০ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। এর মধ্যে ছিল- বর্তমান জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগ; দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার বা অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন; খালেদা জিয়াসহ সব নেতাকর্মীর মুক্তি; ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪ সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী আইন বাতিল; বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস ও পানিসহ জনসেবা খাতের মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সিদ্ধান্ত বাতিল, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে সিন্ডিকেটমুক্ত করা, লুটপাটকারীদের চিহ্নিত করে বিচার, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার বিচার; আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে সরকারি হস্তক্ষেপ পরিহার করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ করে দেওয়া ইত্যাদি।
১০ দফা দাবিতে বিএনপি গত কয়েক মাস ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। সমমনা দলগুলোও বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচি পালন করে আসছে। বিএনপি মহাসচিবের এই ঘোষণার মাধ্যমে ১০ দফার কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে কি না তা পরিষ্কার নয়।
সরকারের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ‘ভোট ডাকাত সরকার ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াতে চেয়ে পারেনি, সারের দাম কয়েক দফায় কয়েকগুণ বাড়িয়েছে, আজ মানুষ পেঁয়াজ কিনতে পারছে না, ডিম কিনতে পারছে না। দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে আওয়ামী লীগ দেশের সম্পদ লুটপাট করে বিদেশে পাচার করে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করেছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের দলের প্রায় ৪০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। সাবেক এমপিসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গুম করেছে। ক্রসফায়ারের নামে নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। অসংখ্য শিশু বাবার জন্য, অসংখ্য স্ত্রী তার স্বামীর জন্য, অনেক মা তার সন্তানের আগমনের প্রতিক্ষা করছে। শেখ হাসিনার সরকার আমাদের এমন দেশ উপহার দিয়েছে।’
এই সরকার উন্নয়নের নামে লুটপাট করছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ উন্নয়নের কথা বলে। সে উন্নয়ন কোথায়? উন্নয়ন তাদের ঘরে। যার সাইকেল ছিল না সেই নেতা এখন গাড়ি চালায়। ভূমিহীন নেতা এখন অসংখ্য আলিশান বাড়ি-গাড়ির মালিক। এসব তাদের উন্নয়ন। দেশকে ধ্বংস করে নিজেদের উন্নয়ন করেছে আওয়ামী লীগ সরকার।
রংপুর থেকে যখন লালমনিরহাটে প্রবেশ করি তখন দেখি রাস্তাঘাট খুব খারাপ। সরকার বলছে উন্নয়ন উন্নয়ন। উন্নয়ন আওয়ামী লীগের ঘরে হচ্ছে, বাইরে নয়। আওয়ামী লীগ নেতারা ব্যাংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন আর দেশের বাইরে বাড়ি করছেন।’
দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব বলেছেন- ফয়সালা হবে রাজপথে। ফিডব্যাক বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশকে আমরা যুদ্ধ করে স্বাধীন করেছিলাম। যে বাংলাদেশের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধারা লড়াই করেছিলেন সেই বাংলাদেশকে আমরা ফিরিয়ে আনবো।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি নেত্রী ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নাম শুনলেই ভয় লাগে। কারণ তারা ত্রাসের রাজনীতি করে। তারা রঙিন চশমা পরে আবারও ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে।’
জেলা বিএনপির সভাপতি আসাদুল হাবীব দুলুর সভাপতিত্বে এতে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য দেন। জনসভায় জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন।