ছিলেন সময়ের সেরা, সর্বকালের সেরাদের একজন। কতশত রেকর্ড তার পায়ে লুটোপুটি খেয়েছে তার হিসাব কষতে বেগই পেতে হয়। কথা হচ্ছে কিংবদন্তি ফুটবলার জিনেদিন জিদানকে নিয়ে। যিনি পেশাদার ফুটবলার হিসেবে জিতেছেন সম্ভাব্য সব দলীয় এবং ব্যক্তিগত পুরস্কার। আর এমন সাফল্যের মোড়কেমাখা ক্যারিয়ার ছিল বলেই কি-না, কোচ জিদান সব সময়ই থেকে গেছেন আলোচনার বাইরে।
রিয়াল মাদ্রিদকে ২০১৫-১৬ মৌসুম থেকে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা এনে দেন জিদান। ইউরোপ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট যেখানে ধরে রাখাই কঠিনতর চ্যালেঞ্জগুলোর একটি, সেখানে জিদানের এমন সাফল্য ঈর্ষণীয়ই বটে। শুধু চ্যাম্পিয়নস লিগ নয়, রিয়ালকে লা লিগা, সুপার কোপা, ক্লাব বিশ্বকাপের ট্রফিও জিতিয়েছেন এই ফ্রেঞ্চম্যান। তকুও কোচ জিদান আলোচনার বাইরে থাকার কারণ—কৌশলগত অদক্ষতায়!
আক্রমণে রোনালদো-বেনজেমা, মিডফিল্ডে ক্রুস-মদরিচ এবং রক্ষণে রামোস-ভারানরা ২০১৫ সাল থেকে নিজেদের ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে ছিলেন বলেই রিয়াল টানা তিনবার ইউরোপ সেরা হয়েছে এমন মত অনেকেরই। জিদানও ঐ তিনবার দলকে শিরোপা এনে দিয়ে রিয়ালকে বিদায় জানান। তবে তার প্রস্থানে হঠাৎ করেই ডুবতে বসে রিয়ালের সিংহাসন। রিয়ালের জন্য জিদান, তখন টের পেয়েছিল সবাই। বাধ্য হয়েই আবার জিদানের শরণাপন্ন লস ব্লাঙ্কো শিবির। ধুঁকতে থাকা প্রিয় ক্লাবকে বাঁচাতে কোচ হিসেবে ২০১৯ সালে আবার বার্নাব্যুতে ফেরেন জিদান।
এই ফেরাটা জিদান নিজের জন্যও হয়তো চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলেন। নিয়েছিলেন কোচ হিসেবে নিজের সত্ত্বার জানান দিতে। যদিও প্রথম দফায় ব্যর্থই হন তিনি। চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোল থেকেই তার দল বাদ পড়ল টানা দুইবার। তবে জিদানের আসল খেল শুরু হয় করোনার মধ্যে শেষ হওয়া গেল ফুটবল মৌসুম থেকে। রিয়ালকে জেতান লা লিগা। অথচ একটা সময় পর্যন্ত বার্সেলোনা থেকে পিছিয়েই ছিল তার দল।
গেল দুই সপ্তাহ জিদানের এই দফার কোচিং ক্যারিয়ারের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং সময় ছিল। মাত্র আট দিনের ব্যবধানে ইংলিশ জায়ান্ট লিভারপুলের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগে (কোয়ার্টার ফাইনালে) দুইবার এবং লিগে এল ক্লাসিকোতে বার্সেলোনার বিপক্ষে একবার মুখোমুখি হতে হয় তাদের। সেটাও দলের মূল রক্ষণ ফুটবলার রামোস-ভারান-কারভাহালদের ছাড়া। শুধু রক্ষণ নয়, আক্রমণের প্রাণভোমরা এদেন হ্যাজার্ডও তো চোটজর্জর জীবন নিয়ে দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে।
লিভারপুলের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের দুই দেখায় খারাপ করলে রিয়াল বাদ পড়ত চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে, বার্সার কাছে হারলে ছিটকে যেত লিগ রেস থেকেও। আগেই কোপা দেল রে থেকে বাদ পড়ায় তখন শিরোপাশূন্য মৌসুমই কাটাতে হতো রিয়ালকে। তবে জিদান তা হতে দেননি। মূল দলের একাধিক খেলোয়াড় ছাড়াও শুধুমাত্র মেধা-প্রজ্ঞায় কৌশল সাজিয়ে রিয়ালকে তুলেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিতে। জিতিয়েছেন এল ক্লাসিকোও। যেখানে অবশ্য তার দলের কৃতিত্বও কম না। তবে পথটা তো বাতলে দিয়েছেন সেই মাস্টারমাইন্ড জিদানই।
যেই রিয়াল কিছুদিন আগেও ছিল শিরোপাশূন্য মৌসুম কাটানোর শঙ্কায়, তারাই এখন ডাবলস (চ্যাম্পিয়নস লিগ ও লা লিগা) জেতার স্বপ্নে বিভোর। আর সেই স্বপ্ন যদি সত্যি হয়ে ধরা দেয়, তবে কোচ হিসেবে অমরত্বই পেয়ে যাবেন জিদান। কারণ, একই মৌসুমে লা লিগা এবং চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের কৃতিত্ব রিয়াল মাত্র তিনবারই দেখাতে পেরেছে। ১৯৫৬/৫৭ এবং ৫৭/৫৮ মৌসুমের পর জিদানের হাত ধরেই ২০১৬/১৭ মৌসুমে ফের এই সাফল্য পেয়েছিল স্প্যানিশ জায়ান্টরা। এবারও যদি এই দুই শিরোপার ছোঁয়া পেয়ে যায়, তবে হোসে ভিয়ালোঙ্গা লরেন্তের পর দ্বিতীয় রিয়াল কোচ হিসেবে দুইবার ডাবলস এনে দেয়ার মালিক বনে যাবেন ‘মাস্টার’ জিদান। কম শক্তির দল নিয়ে এই কঠিন পরীক্ষায় পাস করে ফেললে, জিদানকে মাস্টারমাইন্ড তকমা দিতেও হয়তো থাকবে না আর কোনো দ্বিধা।