‘অক্সিজেন মেশিন ছাড়া আমার পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব না। আল্লাহ যদি মেহেরবানি করেন যতদিন বেঁচে থাকি ওই মেশিনের দ্বারাই আমাকে চলতে হবে।’ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের বিছানায় বসে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে রিকশা চালানো মাইনুরজ্জামান সেন্টু।
রামেক হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন সেন্টুর সঙ্গে মঙ্গলবার (১৬ মে) সন্ধ্যায় কথা হয় ঢাকা পোস্টের এই প্রতিবেদকের। এ সময় তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, চিকিৎসক আমাকে বলেছে একটা মেশিন নিতে হবে। এই মেশিন ছাড়া আমার পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব না। আল্লাহ যদি মেহেরবানি করে যতদিন বেঁচে থাকি ওই মেশিনের দ্বারায় আমাকে চলতে হবে। সাপ্লাই অক্সিজেন আমি এখান (হাসপাতাল) থেকে পাচ্ছি। বাইরে তো আমি কিনতে পারবো না। প্রতিদিন তিনটা করে অক্সিজেন সিলিন্ডার লাগবে। এতে ১৮ ঘণ্টা চলবে।
তিনি বলেন, আমার ২৪ ঘণ্টাই অক্সিজেন লাগবে। তাই ওই মেশিনটা আমাকে কিনতে হবে। এটার দাম মোটামুটি ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা। ওই মেশিন তো কেনার ক্ষমতা আমার নাই। এখন এটার ব্যবস্থা আমাকে করতে হবে।
তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি এই অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে রিকশা চালিয়ে আমার পরিবার চালাই। আমার জন্য অক্সিজেন কিনি। এইভাবে আমি চলাফেরা করি। বর্তমান অবস্থায় মেডিকেলে থাকছি। দুইদিন-চারদিন মেডিকেলে থাকি, আবার পাঁচ-ছয়দিন বাইরে থাকি। অসুস্থতা বেড়ে গেলে আবার এসে মেডিকেলে ভর্তি হই। এভাবেই চলছে। মেশিন কেনার কোনো ব্যবস্থা এখনো হয়নি, করতে পারিনি। কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি যদি আমাকে সাহায্য করে তাহলে আমি কিনবো। জীবনে কারো থেকে কিছু চাইনি, নিজে যতদূর পেরেছি করেছি। এখন আমি অসুস্থ। কেউ আমাকে সহযোগিতা করলে আমি কিনবো।
মাইনুরজ্জামান সেন্টু বলেন, মেশিনটা ম্যানেজ হলে আল্লাহর রহমতে আমি বেঁচে যাব। যদি সম্ভব হয় আপনারা ব্যবস্থা করে দেবেন। আপনাদের কাছে এটাই আমার আবদার। আমাকে কবে রিলিজ (ছুটি) দিবে আমি বলতে পারবো না। যখন আমাকে রিলিজ (ছুটি) দেবে তখনই এই মেশিনটার আমার প্রয়োজন হবে। তখন এই মেশিন ছাড়া আমি চলতে পারবো না। যদি না হয় তাহলে বাইরে থেকে অক্সিজেন কিনে আমাকে বাঁচতে হবে। এই মেশিনটা এখন সবচেয়ে আগে প্রয়োজন।
স্ত্রী চাম্পা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, তার রিকশা চালানোর টাকা দিয়ে আমাদের সংসার চলে। ওখানে থেকেই অক্সিজেন কেনে। আমরা ভাড়া বাসায় থাকি। এখন যদি কেউ আমাদের সহযোগিতা করে তাহলে ভালো হয়।
হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের চিকিৎসক ডা. নিশাদ জামি ঢাকা পোস্টকে বলেন, তিনি দীর্ঘদিন থেকে অসুস্থ। হাসপাতলের প্রায় সব মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিয়েছেন। সেন্টুর শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে। তিনি আর রিকশা চালানো কাজ করতে পারবেন না। উনাকে রেস্ট নিতে হবে।
প্রসঙ্গত, সেন্টু দীর্ঘ সাত বছর ধরে ফুসফুসের সমস্যার কারণে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছেন। গেল দেড় মাসে তিনবার রামেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সবশেষ গত পাঁচ মাস থেকে তার প্রতিদিন তিনটা অক্সিজেনসহ ওষুধ লাগে। তিরি রিকশা চালিয়ে নিজের অক্সিজেন ও সংসার চালানোর টাকা উপার্জন করতেন।