আজ ১৭ এপ্রিল, ঐতিহাসিক ‘মুজিবনগর দিবসের’ সুবর্ণজয়ন্তী। মেহেরপুরের মুজিবনগরকে বলা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের সূতিকাগার। এখান থেকেই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার গঠন ও শপথ বাক্য পাঠ করানো হয়। ১৭ এপ্রিল, বিশেষ এই দিনটি ঘিরে স্বেচ্ছাব্রতী নাগরিক সংগঠন প্রত্যাশা ২০২১ ফোরাম ‘ সমৃদ্ধ বাংলাদেশের শপথ, মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীতে শীর্ষক অনলাইন সেমিনারের আয়োজন করেছিল।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হক। বিশেষ অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ, সমাজ সেবায় একুশে পদকপ্রাপ্ত সংস্কৃতি কর্মি ও নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন, বাংলাদেশ টেলিভিশন এর সাবেক মহাপরিচালক ম. হামিদ, বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক রফিকুর রশিদ এবং খুলনা মহানগর মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট এর কমান্ডার অধ্যাপক আলমগীর কবির।
অনলাইন সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন, তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মসয়ূদ মান্নান, এনডিসি। প্রত্যাশা ২০২১ ফোরাম এর চেয়ারম্যান এস এম আজাদ হোসেন এর সঞ্চালনায় শুভে”ছা বক্তব্য রাখেন ফোরাম এর সদস্য সচিব রুহি দাস এবং প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সচিব আতাউ রহমান মিটন।
আ. ক . ম মোজাম্মেল হক
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যে শুধু একটি মৌখিক ঘোষণা ছিল, বিষয়টি এরকম না। একটি দেশ পরিচালনার জন্য যাবতীয় প্র¯‘তি আমাদের ছিল। ১৭ এপ্রিল মুজিব নগর সরকারের শপথ গ্রহণ এর একটি বড় উদাহরণ। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে প্রতিটি ইউনিয়ন, গ্রাম ও তৃণমূল পর্যায়ের মানুষকে এই উৎসব উদযাপনের সাথে আমরা যুক্ত করতে চাই। পাহাড়ি, সমতল, দলিত, আদিবাসী, সংখ্যালঘু, নারী- পুরুষ, কৃষক, মজুর সব শ্রেণি পেশার মানুষকে এই উৎসবের সঙ্গে যুক্ত করে তাদের অধিকার আদায়ে বর্তমান সরকার কাজ করে যাবে। কোন মানুষ যাতে গৃহহীন না থাকে, কোন মানুষ যাতে না খেয়ে না থাকে, একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা সর্বাত্মকভাবে কাজ করে যাব।
ইলিয়াস কাঞ্চন
স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে এসেও এখনো আমরা মুক্ত চিন্তার স্বাধীনতা ও মানসিকতার স্বাধীনতা পাইনি। দুর্নীতি ও লুটপাট থেকে বেরিয়ে আসতে পারিনি। শুধু পেটের ক্ষুধা নয়, সেই সাথে চিন্তার ক্ষুধা, আমাদের মানসিক দৈন্যতার ক্ষধা ও স্বাধীনতার ক্ষুধাও দূর করতে হবে।
ম. হামিদ
মুক্তিযুদ্ধের জন্য সেই সময় পলিটিক্যাল মুটিভিশনের খুবই দরকারি ছিল। ৭ ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ঐতিহাসিক ভাষণ একটি দেশ স্বাধীনতা এনে দেয়ার জন্য সর্বাত্মকভাবে প্রেরণা জুগিয়েছে।
অধ্যাপক আলমগীর কবির
১৯৭১ সালের অনেক আগে থেকেই স্বাধীনতার জন্য সাধারণ মানুষের মনে একটা হাহাকার ছিল এবং সেই প্রত্যাশা পূরণে আমরা জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। বঙ্গবন্ধুর ডাকে জীবনের সব মায়া ত্যাগ করে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা আমাদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছি।
অধ্যাপক রফিকুর রশিদ
অধিকার হারা মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্যই মূলত ১৯৭১ সালের এই স্বাধীনতা যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। বঞ্চিত মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য ৩০ লক্ষ মানুষ তাদের তাজা প্রাণ ঢেলে দিয়েছেন এবং ২ লক্ষ মা বোন তাদের সম্ভ্রম হারিয়েছেন। এখন শুধু দেশটাকে সুন্দর করে সাজাতে হবে। উল্লেখ্য যে, মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হোক দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশে এই প্রত্যাশা নিয়ে ‘প্রত্যাশা ২০২১ ফোরাম’ ২০০৫ সাল থেকে পলিসি, অ্যাডভোকেসি এবং তৃণমূলে জাগরণ সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, পেশাজীবি, ব্যবসায়ী, আইনজীবীসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এই ফোরামের সদস্য।
আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যে জাতির সন্তানেরা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করতে পারে, তাদের পক্ষে দারিদ্র্যও দূর করা সম্ভব। ইউনিয়নভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে ¯’ানীয় সরকার, প্রতিষ্ঠান সমূহের সক্রিয় নেতৃত্ব, যথাযথ পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণ করলে ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলা কঠিন কোন বিষয় নয়। প্রত্যাশা ২০২১ ফোরাম বিশ^াস করে, মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন এই উৎসব উদযাপনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে এবং আপামর জনসাধরণ সর্বাত্মকভাবে এতে অংশগ্রহণ করবেন। দলমত নির্বিশেষে একটি উৎসবমুখর পরিবেশে আগামী ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হবে। সেই বিশ্বাস ও প্রেরণা থেকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের লক্ষে প্রত্যাশা ২০২১ ফোরাম কাজ করছে।