সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় প্রার্থী নিয়ে একলা চলছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তাদের সঙ্গে নেই ১৪ দলের শরিক দলগুলোর কেউ। যদিও সিলেটে ১৪ দলের মধ্যে অনেকের কোনো অস্তিত্ব নেই। তিন সপ্তাহ আগে ক্ষমতাসীন দল যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত করে। এর পর থেকে দলের স্থানীয় নেতাদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতারাও সিলেটে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। তবে বসা হয়নি শরিক দলগুলোর সঙ্গে। অবশ্য এ নিয়ে শরিকদের মধ্যে তেমন ক্ষোভ বা হতাশাও নেই। কারণ জোটগতভাবে না বসলেও শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সাক্ষাৎ করেছেন, সহযোগিতা চেয়েছেন বলে জানান একাধিক শরিক দলের নেতা। আওয়ামী লীগ ছাড়া ১৪ দলের মধ্যে সিলেটে থাকা বাকি দলগুলো হলো-জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি, সাম্যবাদী দল ও জেপি।
ওয়ার্কার্স পার্টি সিলেট জেলা সভাপতি সিকান্দর আলী যুগান্তরকে জানান, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ১৪ দলের শরিকদের নিয়ে সোমবার পর্যন্ত কোনো সভা হয়নি। তবে দলীয় প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী শরিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করে সহযোগিতা চেয়েছেন। অপরদিকে, সিলেট সিটি নির্বাচনে বর্তমান মেয়র ও বিএপির কেন্দ্রীয় নেতা আরিফুল হক চৌধুরীর প্রার্থিতা নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের সার্বিক গ্রহণযোগ্যতা এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে ট্রাম্পকার্ড হিসাবে বিবেচিত হচ্ছেন আরিফুল হক চৌধুরী। তাকে নির্বাচনে আনতে চাপ দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। বর্তমান সরকারের অধীনে সব নির্বাচন বিএনপি বর্জন করায় সিলেট বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরা মনে করেন আরিফ কখনো দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাবেন না। তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন না। আর আওয়ামী লীগের দাবি, পরাজয় নিশ্চিত জেনে মেয়র নির্বাচন থেকে পালানোর পথ খুঁজছে তারা।
সম্প্রতি ইংল্যান্ড সফরে গিয়ে দলের ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ঢাকায় মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে দেখা করে এলেও আরিফ নির্বাচন করার জন্য সবুজ সংকেত পাননি। তবে বিএনপির এক অংশের দাবি-নানা হিসাব নিকাশ করে জয়ের পাল্লা ভারী বুঝতে পারলেই তিনি নির্বাচন করবেন। দল ছেড়ে বা বহিষ্কার হয়ে পরাজয়ের স্বাদ নিয়ে উভয় কূল হারাবেন না। পরিস্থিতি বুঝতে তিনি সময় নিচ্ছেন।
দলের হাইকমান্ড সিটি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও দলীয় স্থানীয় বিএনপি নেতাদের নির্বাচনি তৎপরতায় শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে দলের নির্বাহী সদস্য ও সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচন করলে বিএনপির চলমান আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন আরিফবিরোধী বিএনপি নেতারা। তাদের দাবি, আরিফের সঙ্গে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের যোগাযোগ রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে তাকে প্রার্থী হওয়ার প্রলোভন দেওয়া হচ্ছে। এমন কথোপকথন চলছে দলের মধ্যে। ২০ মে নাগরিক সমাবেশ ডেকেছেন আরিফুল হক চৌধুরী। ওই সমাবেশেই তার নির্বাচনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা। এ ব্যাপারে আরিফুল হক চৌধুরী যুগান্তরকে জানান, নির্বাচন নিয়ে চাপের কিছু নেই। একটু অপেক্ষা করেন। ২০ মে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।
এদিকে, দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আসন্ন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে জাসদ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি, ন্যাপ ও সাম্যবাদী দলের সিলেট জেলা ও মহানগর শাখা যৌথ সভা করেছে। বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর জিন্দাবাজারে নজরুল একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন গণতন্ত্রী পার্টি সিলেট জেলা সভাপতি আরিফ মিয়া। জাসদ সিলেট জেলা সাধারণ সম্পাদক কেএ কিবরিয়া চৌধুরীর পরিচালনায় সভায় বক্তব্য দেন জেলা জাসদের সভাপতি লোকমান আহমদ, ওয়ার্কার্স পার্টি সিলেট জেলা সভাপতি সিকান্দর আলী, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দীন বন্ধু পাল, সাম্যবাদী দলের সম্পাদক ব্রজ গোপাল চৌধুরী, সিলেট মহানগর জাসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. ফারুক আহমদ, সাধারণ সম্পাদক গিয়াস আহমদ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ সিলেট জেলা সভাপতি এমএ মতিন, জেলা গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক জুনেদুর রহমান চৌধুরী। বিস্তারিত আলোচনা শেষে আসন্ন সিলেট সিটি নির্বাচন নিয়ে পরবর্তী সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানানো হয়।