গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার চান্দুরা এলাকার ওষুধ বিক্রেতা আলমগীর হোসেন। গত ২৯ এপ্রিল বিকেল ৪টায় বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। তার কোনো সন্ধান না পেয়ে কালিয়াকৈর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে পরিবার। পরে ছায়া তদন্ত করতে গিয়ে র্যাব জানতে পারে, মুক্তিপণ আদায়ের লক্ষ্যে ওই ব্যবসায়ীকে অপহরণ করা হয়েছে।
র্যাব জানতে পারে, গাজীপুর থেকে অপহরণ করে ওই ব্যবসায়ীকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর ছনটেকে আটকে রেখে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। খবর পেয়ে গতরাতে (সোমবার) অপহরণকারী চক্রের আটজনকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি ভুক্তভোগী আলমগীরকে (৪২) উদ্ধার করে র্যাব-১০ এর একটি দল।
র্যাব-১০ বলছে, আলমগীরের কাছে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছিল অপহরণকারীরা। টাকা না পাওয়ায় প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। এছাড়া চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। ভুক্তভোগীর শরীরে গরম তেল ঢেলে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ইস্ত্রি দিয়ে ছেঁকা দিয়ে ঝলসে দেয় অপহরণকারীরা।
মঙ্গলবার (২ মে) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-১০ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দীন।
তিনি বলেন, গত ২৯ এপ্রিল বিকেল ৪টায় গাজীপুরের কালিয়াকৈর চান্দুরা এলাকার বাসা থেকে বের হন ওষুধ ব্যবসায়ী আলমগীর। তিনি জমি কেনার জন্য কালিয়াকৈর থানার চান্দুরা চৌরাস্তার দিকে যান। তবে রাত ১১টার পরও আলমগীরের ফিরে আসায় ও কোনো খোঁজ-খবর না থাকায় কালিয়াকৈর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে তার পরিবার।
পরদিন ৩০ এপ্রিল সকাল ১১টায় আলমগীরের স্ত্রীর মোবাইল ফোনে অজ্ঞাত একজন ব্যক্তি ফোন দিয়ে জানায়, তারা আলমগীরকে অপহরণ করেছে। সেসময় আলমগীরকে নির্যাতন করে চিৎকারের আওয়াজ শুনিয়ে তার পরিবারের কাছে মুক্তিপণ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে।
দাবি করা টাকা না পেলে তারা আলমগীরকে প্রাণে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। পরিবার দাবি করা মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে না পেরে নিরুপায় হয়ে ভুক্তভোগীকে উদ্ধারের জন্য র্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
র্যাব-১০ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দীন বলেন, সোমবার (১ মে) র্যাব-১০ তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে যাত্রাবাড়ীর বউবাজার ছনটেক এলাকায় একটি অভিযান পরিচালনা করে। সেখান থেকে অপহৃত আলমগীরকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
এসময় গ্রেপ্তার করা হয় সিয়াম আল জেরিন তালুকদার (৩৩), রাসেল শেখ ওরফে মিঠু (৩৩), শহিদুল ইসলাম (৩৭), প্রণব নারায়ণ ভৌমিক (৫০), মো. আলমগীর (৪২), আ. রব খান (৭৮), সৈয়দা জান্নাত আরা উর্মি (২৭) ও ইসরাত জাহান সায়লা (২৯) নামে মোট আটজনকে।
এসময় তাদের কাছ থেকে একটি খেলনা পিস্তল, তিনটি চাকু, একটি হাতুড়ি, একটি ইস্ত্রি, একটি লাঠি, একটি বেলনা, একটি বেল্ট, একটি হুক্কা ও ১৩টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
র্যাব-১০ এর অধিনায়ক বলেন, অপহরণকারীরা ভুক্তভোগী আলমগীরের কাছে জমি বিক্রির কথা বলে এখানে-সেখানকার কথা বলে তাকে নিয়ে সুযোগের অপেক্ষায় বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে থাকে। পরে বিকেল ৪টার দিকে তাদের সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে গিয়ে খেলনা পিস্তল দিয়ে মৃত্যুর ভয় দেখায়। পরে সিএনজি অটোরিকশায় ছনটেক বউবাজার এলাকায় তাদের ডেরায় নিয়ে যায়।
সেখানে নিয়ে আলমগীরকে সবাই মিলে লাঠি, বেলনা ও বেল্ট দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। মারধরের একপর্যায়ে ভুক্তভোগীর শরীরের পেছনের অংশে গরম তেল ঢেলে দেয়। পরবর্তীতে শরীরের ওই স্থানসহ দেহের বিভিন্ন অংশে ইস্ত্রি দিয়ে ছেঁকা দিয়ে চামড়া তুলে ফেলে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্মমভাবে নির্যাতন করতে থাকে। এভাবে তারা দাবি করা মুক্তিপণ আদায়ের জন্য চাপ দিতে থাকে।
অতিরিক্ত ডিআইজি ফরিদ বলেন, গ্রেপ্তাররা বেশ কয়েকদিন ধরে গাজীপুরের চান্দুরাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় জমি কেনার বাহানাসহ বিত্তশালী ব্যক্তিদের বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন দেখাতো। পরে ডেকে এনে খেলনা পিস্তল দিয়ে ভয় দেখিয়ে তাদের অপহরণ করত। পরে তারা ছনটেকসহ তাদের বিভিন্ন ডেরায় নিয়ে গিয়ে আটকে রেখে তাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালাতো।
নির্যাতনের ভিডিও মোবাইল ফোনে ধারণ করে ভুক্তভোগীদের পরিবারের কাছে পাঠানো হতো। পরবর্তী সময়ে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে তাদের পরিবারের কাছে মুক্তিপণ হিসেবে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করতো। গ্রেপ্তার শহিদুল ইসলাম ছোটন এর আগেও ভুয়া পুলিশের মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন বলেও জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।