দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়ে ২৫ লাখ ৯০ হাজার জনে দাঁড়িয়েছে। ২০২২ সালের শেষ তিন মাসে (অক্টোবর- ডিসেম্বর) চতুর্থ কোয়ার্টার বেকার ছিল ২৩ লাখ ২০ হাজার। সে হিসেবে তিন মাসে বেড়েছে বেকারের সংখ্যা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর অধীন ‘শ্রমশক্তি জরিপের মাধ্যমে শ্রমবাজার তথ্যের উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতাধীন ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৩ এর প্রথম ত্রৈমাসিকের (জানুয়ারি-মার্চ/২০১৩) ফলাফলে এই তথ্য উঠে এসেছে।
এসব ব্যক্তি সপ্তাহে এক ঘণ্টাও কাজ পায় না। ত্রৈমাসিকের জরিপ অনুযায়ী, বেকারদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ১৭ লাখ ১০ হাজার জন। আর বেকার নারী ৮ লাখ ৮০ হাজার।
গত শ্রম জরিপ ২০২২ অনুযায়ী, পুরুষ ১৬ লাখ ৯০ হাজার আর বেকার নারী ৯ লাখ ৪০ হাজার ছিল। সে হিসেবে তিন মাসের জরিপে পুরুষ বেকার বেড়েছে কমেছে নারীর সংখ্যা।
মঙ্গলবার (২ মে) শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান প্রকল্প পরিচালক আজিজা রহমান। সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। এছাড়াও বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনারা আরেফিন। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো মহাপরিচালক মো. মতিয়ার রহমান।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক পরিচালিত জরিপগুলোর মধ্যে শ্রমশক্তি জরিপ একটি গুরুত্বপূর্ণ জরিপ। সর্বশেষ ২০২২ সালে এই জরিপটি পরিচালিত হয়। যার প্রভিশনাল রিপোর্ট ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে ২০২৩ সালে শ্রমশক্তি জরিপ দেশব্যাপী পরিচালিত হচ্ছে।
শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য সংগ্রহের জন্য সমগ্র বাংলাদেশে ১ হাজার ২৮৪টি পিএসইউ এবং প্রতিটি পিএসইউতে ২৪টি থানা দ্বৈবচয়নের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি কোয়ার্টারে ৩০ হাজার ৮১৬ খানা হতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এভাবে ১ বছরে তিন মাস ধরে চারটি কোয়ার্টার সম্পন্ন করা হবে। এই জরিপের মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর (১ জানুয়ারি ৩১ মার্চ প্রথম ত্রৈমাসিক, ১ ফেব্রুয়ারি-৩০ জুন দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক, এবং ১ জুলাই- ৩০ সেপ্টেম্বর তৃতীয় কোয়ার্টার, এবং ১ অক্টোবর- ৩১ ডিসেম্বর চতুর্থ কোয়ার্টার), ২০২৩ সালে চলমান থাকবে। মূলত এই জরিপে প্রাপ্ত উপাত্ত হতে জাতীয় শ্রমশক্তির সুষ্ঠু ব্যবহার ও কর্মসংস্থান এবং বেকারত্ব নিরসনে প্রয়োজনীয় নীতি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৩ এর প্রথম ত্রৈমাসিকের (জানুয়ারি-মার্চ) ফলাফল অনুযায়ী মোট শ্রমশক্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠী ৭৩ দশমিক ৬৯ মিলিয়ন বা ৭ কোটি ৩৬ লাখ ৯০ হাজার। এরমধ্যে পুরুষ ৪ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার আর নারী ২ কোটি ৫৪ লাখ ৪০ হাজার। এছাড়াও কর্মে নিয়োজিত জনগোষ্ঠী বর্তমানে ৭১ দশমিক ১০ মিলিয়ন (পুরুষ ৪৬ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন, মহিলা ২৪ দশমিক ৫৬ মিলিয়ন)।
২০২২ সালের জরিপে দেশে মোট শ্রমশক্তি ছিল ৭ কোটি ৩৪ লাখ ১০ হাজার। এর মধ্যে পুরুষ ৪ কোটি ৭৪ লাখ ৮ হাজার এবং নারী ২ কোটি ৫৯ লাখ ৩ হাজার ছিল।
শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৩ প্রথম কোয়ার্টার অনুযায়ী শ্রমশক্তির বাইরে অবস্থিত জনগোষ্ঠী ৪৬ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন (পুরুষ ১১ দশমিক ১৯ মিলিয়ন, মহিলা ৩৫ দশমিক ২০ মিলিয়ন)। এছাড়াও শ্রমশক্তিতে অংশ গ্রহণের হার ৬১দশমিক ৩৭ শতাংশ। অর্থনৈতিক খাত অনুযায়ী কৃষিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৩১ দশমিক ৯৪ মিলিয়ন, শিল্পখাতে ১২ দশমিক ২৫ মিলিয়ন এবং সেবায় ২৬ দশমিক ৯১ মিলিয়ন। শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৩ এর প্রথম ত্রৈমাসিক যুব শ্রমশক্তি ২৭ দশমিক ৩৮ মিলিয়ন (পুরুষ ১৪ দশমিক ৩ মিলিয়ন, মহিলা ১৩ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন)।
এই জরিপের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ও নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট এসডিজি এবং পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে জানান কর্মকর্তারা।
বেকারত্বের হারে দেখা গেছে, একই সময় শ্রম শক্তি জরিপ ২০২২ প্রথম কোয়ার্টারে ছিল ৪.০ যা প্রথম কোয়ার্টার ২০২৩ সালে ৩ দশমিক ৫১।
বিবিএস জরিপ ২০২২ সালের রিপোর্টে শ্রম শক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের হার ছিল ৪২ দশমিক ৬৮ শতাংশ। কৃষি খাতে ৩২ দশমিক ২, শিল্পে ১২ দশমিক শূন্য ৫ ও সেবা খাতে ২৬ দশমিক ৬৫ মিলিয়ন জনগোষ্ঠী কাজে নিয়োজিত।