ইউক্রেনে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। সোমবার (১ মে) গভীর রাতে ইউক্রেন অভিমুখে এসব ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। তবে রাশিয়ার নিক্ষিপ্ত এসব ক্ষেপণাস্ত্রের বেশিরভাগই ধ্বংস করে দেওয়ার দাবি করেছে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী।
সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার গভীর রাত ও ভোরে রাশিয়ার নিক্ষেপ করা ১৮টি ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে ১৫টি ইউক্রেনীয় বিমান প্রতিরক্ষা ক্রুরা ধ্বংস করে দিয়েছে বলে দাবি করেছে দেশটির সামরিক বাহিনী। মূলত সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বৈশ্বিক পরাশক্তি এই দেশটি তার প্রতিবেশীর ভূখণ্ডে আক্রমণ আরও জোরালো করেছে।
ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার-ইন চিফ ভ্যালেরি জালুঝনির টেলিগ্রাম চ্যানেলে দেওয়া এক পোস্টে বলা হয়েছে, ‘সোমবার রাত আড়াইটার দিকে রাশিয়ান হানাদাররা কৌশলগত বিমান থেকে ইউক্রেন আক্রমণ করেছিল।’
এতে আরও বলা হয়, রাশিয়ার নিক্ষেপ করা ১৮টি ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে ১৫টি ধ্বংস করা হয়েছে।
কিয়েভের শহরের কর্মকর্তারা টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপে লিখেছেন, রাজধানী কিয়েভ অভিমুখে ধেয়ে আসা সমস্ত ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস হয়ে গেছে। গত তিন দিনের মধ্যে এ নিয়ে শহরটিতে দ্বিতীয় দফায় হামলা চালানো হলো বলেও জানিয়েছেন তারা।
কিয়েভ শহর প্রশাসন বলেছে, ‘(প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী) বেসামরিক জনসংখ্যার মধ্যে কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি এবং আবাসিক স্থাপনা বা অবকাঠামোর ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।’
কর্মকর্তারা বলেছেন, রাজধানীর বাইরে বৃহত্তর কিয়েভ অঞ্চলকে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র থেকে রক্ষা করার জন্য বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়েছিল।
এদিকে ডিনিপ্রো আঞ্চলিক পরিষদের প্রধান মাইকোলা লুকাশুক বলেছেন, রাশিয়া রাতের আঁধারে ইউক্রেনের যেসব অঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে তার মধ্যে ডিনিপ্রপেট্রোভস্কও রয়েছে। এয়ার ডিফেন্স ক্রুরা সাতটি ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে ভূপাতিত করেছে, কিন্তু এই ঘটনায় ২৫ জন আহত হয়েছেন এবং তারা চিকিৎসা সহায়তা চেয়েছেন।
তিনি আরও জানিয়েছেন, পূর্ব ইউক্রেনের পাভলোহরাদ শহরেও রাতের আঁধারে দু’টি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। এতে একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান, ১৯টি অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং এবং ২৫টি প্রাইভেট বিল্ডিংসহ অন্যান্য অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে।
লুকাশুক বলেছেন, ‘এছাড়াও হামলার জেরে আগুন লেগেছে, জরুরি পরিষেবা কাজ করছে।’
অন্যদিকে জাপোরিঝিয়া অঞ্চলের রাশিয়ান-নিযুক্ত প্রশাসনের কর্মকর্তা ভ্লাদিমির রোগভ পাভলোহরাদ শহরে আগুনের ছবি ও ভিডিও পোস্ট করে বলেছেন, রাশিয়ান বাহিনী সেখানে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে।
রাশিয়া বলেছে, সাম্প্রতিক কিছু হামলা দীর্ঘ পরিকল্পিত পাল্টা আক্রমণের জন্য কিয়েভের পরিকল্পনাকে বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যে চালানো হয়েছে।
এর আগে গত শুক্রবার রাশিয়া ইউক্রেনজুড়ে বেশ কিছু শহরে বড় ধরনের হামলা চালায়। এতে অন্তত ২৫ জন নিহত হয়। গত কয়েক মাসের মধ্যে এটি ছিল এ ধরনের প্রথম হামলা। এরপর রুশ-নিয়ন্ত্রিত ক্রিমিয়ার এক তেলের ডিপোতে ড্রোন হামলায় বিশাল অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি হয়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত ভিডিওতে সেভাস্তপোলের এই এলাকার ওপর ধোঁয়া এবং আগুনের কুণ্ডলী দেখা যাচ্ছে। যদিও ওই ঘটনায় কেউ আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন মস্কোর নিয়োগ করা আঞ্চলিক গভর্নর।
অন্যদিকে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, তাদের সামরিক বাহিনী ইউক্রেনের রিজার্ভ সেনা ইউনিটগুলোকে টার্গেট করে হামলা চালিয়েছে। মস্কো এর আগে বলেছিল, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক মানুষের ওপর হামলা চালায় না। কিন্তু ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ আহত বা নিহত হয়েছেন।