পঞ্চগড়ে চা ও পাথর শিল্পে কাজ করেন হাজার হাজার নারী-পুরুষ। পুরুষদের সঙ্গে সমানতালে কাজ করলেও মজুরি বৈষম্য রয়েছে এ জেলার নারী শ্রমিকদের। তবুও পরিবারের মৌলিকা চাহিদা মেটাতে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। প্রতি বছর শ্রমিক দিবস এলেও তাদের কাছে এই দিনটি অন্য দিনগুলোর মতোই বলে জানান তারা। তাই তো প্রতিদিনের মতো আজও কাজে যেতে দেখা গেছে তাদের।
বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, শহরে ঢাক ঢোলে শ্রমিক দিবস উদযাপিত হলেও গ্রামাঞ্চলে শ্রমিকরা পাথর সাইটে ও চা বাগানে কাজ করছেন। বাংলাবান্ধা, সিপাইপাড়া, তিরনইহাট, সরদারপাড়া, শালবাহানসহ বিভিন্ন পাথর সাইটে শ্রমিকদের কাজ করতে দেখা যায়। একজন আরেক জনের মাথায় পাথরের ঢাকি তুলে দিচ্ছেন, তা মাথায় নিয়ে কেউ মেশিনে ঢেলে দিচ্ছেন, কেউবা আবার আলাদা স্থানে রাখছেন। পাথর ভাঙা মেশিনের বিকট শব্দ ও ধুলো মাখা শরীরে দিনভর কাজ করে যাচ্ছেন তারা।
স্থানীয় কয়েকজন নারী শ্রমিক জানান, অভাব থাকলে জীবনে আনন্দ থাকে না। ভোরে পাথরের সাইটে উপস্থিত হতে হয় তাদের। পুরুষদের সঙ্গে সারাদিন সমানতালে কাজ করলেও তাদের থেকে মজুরি কম পান তারা। পুরুষ শ্রমিকদের ৫০০ টাকা দেওয়া হলেও তাদরে দেওয়া হয় ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। বর্তমানে বাজারে সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে এই মজুরিতে কিছু না হলেও বাড়িতে বসে থাকার উপায় নেই তাদের। জীবিকার তাগিদে প্রতিদিনই কাজে যেতে হয় তাদের।
আজ পহেলা মে, শ্রমিক দিবস। কাজ না করে বাড়িতেই থাকতে পারতেন। এমন কথার জবাবে তাহেরা বানু বলেন, পেটের ক্ষুধা তো আনন্দ বুঝে না। পেট ভরা থাকলে আনন্দ ভালো লাগে। এসব দিবস-টিবস বুঝিনা। প্রতিদিনই আমাদের দিবস। একদিন বসে থাকলে খাবার জোগাবে কে?
চা শ্রমিক আমিরন বলেন, মাত্র ২শ’ আড়াইশো টাকার মজুরিতে চা বাগানে কাজ করি। বেটা মানুষ (পুরুষ) পায় আমাদের থেকে বেশি। এই মজুরিতে কী সংসার চলে? পোলাপান নিয়া খুব কষ্টে দিন চলে। মজুরি যদি বাড়তো তাহলে খুব ভালো হতো।
বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কুদরত-ই-খুদা মিলন বলেন, বাংলাবান্ধা ইউনিয়নে স্থলবন্দরের পাথরের কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছে কয়েক হাজার শ্রমিক। তাদের মধ্যে নারী শ্রমিক রয়েছেন ৩ হাজারেরও বেশি। এসব নারীরা কর্মক্ষেত্রে নানা প্রতিকূলতা পার করে পুরুষের সঙ্গে সমানতালে কাজ করছেন। কিন্তু নারীদের মজুরি বৈষম্য রয়েছে। তবে আগের থেকে এখন অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। আমরাও ব্যবসায়ীদের বারবার বলছি নারী-পুরুষের কর্মের সমতার সঙ্গে মজুরিরও সমতা করা হোক।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, কর্মক্ষেত্রে নারীরা এখন অনেক অগ্রসর। সরকারিভাবে নারীরা বেতন বৈষম্যে না থাকলেও সাধারণ কর্মজীবি নারীরা যাতে বৈষম্যের শিকার না হয়, তারাও যেন সমান মজুরি পায়, সে বিষয়ে আজকের মে দিবসের অনুষ্ঠানে আলোকপাত করা হয়েছে। সমাজের প্রতিটি অংশে নারীদের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সমাজের রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করে নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।