শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে একক ভর্তি পরীক্ষা বাস্তবায়নে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তিনি বলেছেন, শিগগিরই ভর্তির রূপরেখা তৈরি করতে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হবে। আমাদের চেষ্টা থাকবে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে একক ভর্তি চালু করা।
সোমবার (৩ এপ্রিল) দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে একক পরীক্ষা নেওয়া ও ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি বা এনটিএ গঠনের বিষয়ের করণীয় নির্ধারণের সভা শেষে তিনি এ তথ্য জানান।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আগামী বছর থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে কীভাবে একটি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া যায়, সে বিষয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। সমন্বিত একটি পরীক্ষা হবে, তবে বছরে সেটি একবার নয়, বছরে হয়তো দু’বার হবে।
তিনি বলেন, সমন্বিত এই পরীক্ষা কীভাবে হবে, কী পদ্ধতিতে হবে সেগুলো ঠিক করার বিষয় রয়েছে। সারা বিশ্বে উন্নত দেশগুলোতে যেভাবে হয় আমাদেরটাও সেভাবে হবে। আমাদের নতুন করে উদ্ভাবনের কোনো কিছু নেই। বিভিন্ন দেশে এ প্রক্রিয়া ভালোভাবেই চলছে। সেগুলো পর্যালোচনা করে আমাদের জন্য যেটা সবচেয়ে বেশি উপযোগী, যেটিতে কোনো হয়রানি থাকবে না, সেই পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। আমরা সেই প্রক্রিয়ার আলোচনা শুরু করেছি।
ড. দীপু মনি বলেন, এনটিএ করতে একটি কমিটি গঠন করবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এ কমিটি সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে একটি ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কাজটি এগিয়ে নিয়ে যাবে।
ইউজিসি চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে ভর্তি পরীক্ষা হলে স্বল্প সময়ের মধ্যে পাঠদান শুরু করা যাবে। একক ভর্তি পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন করা গেলে সবার কাছে এটি গ্রহণযোগ্যতা পাবে। একক ভর্তি পরীক্ষার সফলতা উচ্চশিক্ষায় বিশাল একটি অর্জন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বৈঠকে উপস্থিত একজন উপাচার্য জানান, ইউজিসির একজন সদস্যের নেতৃত্বে এই কমিটি গঠন করা হবে। কমিটিতে দেশের বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতিনিধি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের রাখা হবে। কমিটির একটি ফরম্যাট প্রস্তুত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জমা দিতে ইউজিসিকে বলা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর কমিটি আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু করবেন বলেও জানান তিনি।
ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে সভায় কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগম, প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর, প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ ও প্রফেসর ড. মো. আবু তাহের, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আবু ইউসুফ মিয়া ও ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) প্রফেসর ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববদ্যিালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মশিউর রহমান, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি ও ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. হাবিবুর রহমান সভায় অংশগ্রহণ করেন।
সভায় একক ভর্তি পরীক্ষার জন্য একটি কাঠামো, জাতীয় পর্যায়ে একটি নীতিমালা তৈরি ও পরীক্ষার মাধ্যমে একটি স্কোর দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর ও একক ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগম।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামানের সই করা এক চিঠিতে বলা হয়, শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে গত ২৭ মার্চ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিচালন নীতি ও শিক্ষার মানোন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় আগামী বছর থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয়কে একক আওতাভুক্ত করে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বলা হয়েছে, পর্যায়ক্রমে এনটিএ গঠন করতে হবে। এই বিষয়ে ইউজিসিকে উদ্যোগ নিতে হবে।