চলতি বছর ঘোষিত হজ প্যাকেজ নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনা চলছে। আগামীতে এ খরচ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এ অবস্থায় আগামী বছর ১ লাখ ২১ হাজার তো দূরের কথা ৫০ হাজার মানুষ হজে যাবেন কি তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
রোববার (২ এপ্রিল) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় একটি রেস্টুরেন্টে রিলিজিয়াস রিপোর্টার্স ফোরামের (আরআরএফ) উদ্যোগে আয়োজিত হজ প্যাকেজ-২০২৩ ও ব্যবস্থাপনা শীর্ষক সেমিনারে এমন শঙ্কা প্রকাশ করা হয়।
সেমিনারে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান ও হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আরআরএফের সহ-সভাপতি ও দ্য ডেইলি স্টারের সিনিয়র রিপোর্টার রাশেদুল হাসান।
সেমিনারে জানানো হয়, এ বছর সৌদি আরব থেকে প্রাপ্ত কোটা অনুযায়ী মোট ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন বাংলাদেশি পবিত্র হজ পালনের সুযোগ পাবেন। প্যাকেজ মূল্য অস্বাভাবিক হওয়ায় ৭ বার সময় বাড়িয়েও নির্ধারিত কোটা এখনো পূরণ হয়নি। আজ পর্যন্ত এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৩১১। হজের রেজিস্ট্রেশনের ইতিহাসে এমন নজিরবিহীন ঘটনা অতীতে কখনো ঘটেনি। আগে যেখানে রেজিস্ট্রেশনের পরেও রিপ্লেস কোটা নিয়ে বাণিজ্যসহ নানা রকম তদবির হত, এ বছর সেখানে এখনো খালি রয়েছে ৮ হাজার ৮৮৭ কোটা। সরকারি কোটাও খালি রয়েছে ৫ হাজার। এগুলোও বেসরকারি এজেন্সিকে ফেরত দেওয়া হতে পারে পূরণের জন্য।
অভিযোগ উঠেছে হজ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের অতি ব্যবসায়িক মানসিকতাই এর পেছনে দায়ী। প্যাকেজের অন্যান্য খাতেও ব্যয় কমানোর সুযোগ ছিল। এবার বিশ্বের প্রায় দেশে তুলনামূলকভাবে হজের খরচ বৃদ্ধি হলেও বাংলাদেশের হজযাত্রীদের খরচ তুলনামূলক অনেক বেশি। ইন্দোনেশিয়া থেকে একজন মুসলমানকে হজে যেতে হলে ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৩৪৭ টাকা খরচ করতে হবে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৭০ শতাংশ বেশি। মালয়েশিয়ায় যেসব পরিবারের মাসিক আয় ৯৬ হাজার টাকার কম, সেসব পরিবারের সদস্যদের জন্য হজের খরচ ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৮ হাজার ৭৫৪ টাকা। মাসিক আয় বেশি হলে দিতে হবে ২ লাখ ৫৮ হাজার ৬০০ টাকা। দেশটিতে হজের জন্য সরকার বড় অঙ্কের ভর্তুকি দিয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের এ খাতে কোন ভর্তুকি দেওয়া হয়নি।
সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, এ বছর কোনো মতে ১ লাখ ২০ হাজার পর্যন্ত হাজী পাওয়া গেলেও আগামী বছর ৫০ হাজার হজযাত্রী রেজিস্ট্রেশন করবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।
এর ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয়, এ বছর গত ৩ বছরে জমে থাকা যাত্রীদের মধ্য থেকে নিয়ে কোটা পূরণ করা সম্ভব হয়েছে। এখন আর পুরানো কোনো হজযাত্রী নেই। অর্থাৎ রেজিস্ট্রেশনের উদ্ধৃত কোনো যাত্রী জমা নেই। তাহলে এত বেশি টাকা দিয়ে যদি হজ করতে হয় তাহলে আগামী বছরগুলোতে তেমন কোনো হজযাত্রী পাওয়া যাবে না। এতে করে এ বছর কোটা পূরণ করতে ব্যর্থ হলে আগামী বছরগুলোতে সৌদি সরকারও বাংলাদেশের জন্য কোটা সীমিত করে দিতে পারে। সুতরাং বিষয়টি নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে।
অনুষ্ঠানে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, হজ প্যাকেজ নিয়ে অসন্তোষ আছে। হজের খরচ বাংলাদেশ ও সৌদি অংশে নির্ধারণ হয়। সৌদি অংশের খরচ সব দেশের জন্য সমান। কিন্তু বাংলাদেশের অংশে খরচ বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ বেশি বিমান ভাড়া।
তিনি বলেন, আমাদের দাবি ছিল হজের বিমান ভাড়া নির্ধারণ করার জন্য টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করার। এটা করতে পারলে বিমানের সঠিক ভাড়া নির্ধারণ করা সম্ভব হতো। বিমান ভাড়া কমলে হজ খরচ কমবে। বিমান ভাড়া কমানোর জন্য সব জায়গায় চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে শেষ ভরসাস্থল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন করছি। আশা করছি তিনি মানবিক কারণে এটা দেখবে।
তিনি বলেন, বিমান ২০২১ ও ২০২২ সালে করোনাও ইউক্রেন যুদ্ধের অজুহাত দেখিয়ে দাম বাড়ানো হলেও এবার কেন বিমান ভাড়া বাড়াল সে বিষয়ে কোনো উত্তর নেই।
অনুষ্ঠানে আরআরএফের সভাপতি উবায়দুল্লাহ বাদলের সভাপতিত্বে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব দীপ আজাদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মোরসালিন নোমানীসহ বিভিন্ন ইসলামিক দলের নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আরআরএফের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাবলু।