বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দল যেন জাদুর কাঠিতে বদলে গিয়েছে। টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের ধবলধোলাইয়ের পর যেন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে টাইগাররা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত এই ফরম্যাটে এবার আইরিশদের এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ হারিয়েছে বাংলাদেশ। আজ সাগরিকায় দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে সফরকারীদের ২০৩ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য দেয় লিটন-রনিরা। সেই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দাঁড়াতেই পারেনি পল স্টার্লিংরা। টাইগার বোলারদের দাপটে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একাধিক রেকর্ড গড়ার দিনে ৭৭ রানের বড় ব্যবধানে জয় তুলে নিয়েছে সাকিব আল হাসানের দল।
২০৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইনিংস শুরুর প্রথম বলেই তাসকিনের অফ স্টাম্পের বাইরের বলটা তাড়া করতে গিয়েছিলেন আইরিশ অধিনায়ক। কিন্তু উইকেটের পেছনে ডানদিকে লাফিয়ে দারুণ ক্যাচ নেন লিটন। ফলে শরুতেই শূন্য রানে আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন স্টার্লিং। ফলে ১ ওভার শেষে ৭ রানে এক উইকেটে হারিয়ে থাকে সফরকারীরা।
এরপর দ্বিতীয় ওভার করতে আসে টাইগার অধিনায়ক। নিজের প্রথম ওভারের প্রথম বলেই সাজঘরে ফেরান লরকান টাকারকে। এরপর দলীয় ৭ রানে ৫ বলে ৬ রান করে আউট হন টাকার। টাকারের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন হ্যারি টেকটর। সেই ওভার থেকে ৫ রান সংগ্রহ করে আয়ারল্যান্ড।
ইনিংসের তৃতীয় ওভারে দুই ছক্কায় ১৫ রান সংগ্রহ করে আয়ারল্যান্ড। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে ফের বোলিংয়ে এসে রস অ্যাডায়ারকে বোল্ড করেন সাকিব। দলীয় ২৬ রানে ৫ বলে ৬ রান করে আউট হন রস অ্যাডায়ার। ওভারের শেষ বলে উইকেটে আসা গ্যারেথ ডেলানিকে আউট করেন সাকিব। শূন্য রানে পথ ধরেন এই ব্যাটার।
এরপর সাকিবের ঘূর্ণিতে একে একে সাজঘরে ফেরেন আইরিশ ব্যাটাররা। এই বাঁহাতি অলরাউন্ডারের রেকর্ড বোলিংয়ে ১২৫ রানে থামে আয়্যারল্যান্ড। বল হাতে লাল-সবুজের জার্সিতে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে একাধিকবার পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন সাকিব। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক হতে মাত্র চারটি উইকেট প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের। আইরিশদের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে ৫ উইকেট নিয়ে এক নতুন ইতিহাস গড়েন এই অলরাউন্ডার।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সাকিবের উইকেট ১৩৬টি। আইরিশদের বিপক্ষে সাগরিকায় আজ ৫ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হিসেবে এই রেকর্ড গড়েছেন সাকিব।
এর আগে বৃষ্টির বাগড়ায় তিন ওভার কমিয়ে নিয়ে আনা হয়েছে ম্যাচের দৈর্ঘ্য। ম্যাচের ওভার কমে আসলেও টাইগার ওপেনারদের খেলার ধরণ যেন সেই আগের ম্যাচের মতোই। আগ্রাসী মনোভাবে প্রথম ওভার থেকেই খেলতে থাকে লিটন ও রনি। চতুর্থ ওভারেই দলীয় অর্ধশতক পূরণ করেন দুই ওপেনার।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম অর্ধশতকের রেকর্ডের মালিক ছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। বাংলাদেশের প্রথম সুপারস্টারের এই রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন টাইগার ওপেনার লিটন কুমার দাস। আজ সাগরিকায় আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ১৮ বলে অর্ধশতক তুলে নিয়েছেন এই ডানহাতি ব্যাটার। আর তাতেই বনে গেছেন বাংলাদেশের সবচেয়ে দ্রুততম অর্ধশতক হাঁকানোর মালিক।
২০০৭ সালে জোহানেসবার্গে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০ বলে অর্ধশতক করে রেকর্ড গড়েছিলেন আশরাফুল। আজ ১৬ বছর পর সেই রেকর্ড নিজের করে নিলেন লিটন দাস। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৫টি চার ও ৩টি ছয়ের মাধ্যমে ১৮ বলে অর্ধশতক পূরণ করেছেন এই ওপেনার।
এই রেকর্ডের পর আরও আরেকটি রেকর্ড গড়েন লিটন, সঙ্গী হিসেবে পান ওপেনার রনিকে। এই দুই ডানহাতি ব্যাটার মিলে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়েন। ১২৪ রানের জুটি গড়েন লিটন ও রনি। ওপেনিংয়ে এখন এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি। আগের সর্বোচ্চ ছিল মোহাম্মদ নাঈম ও সৌম্য সরকারের ১০২ রানের।
২৩ বলে ৪৪ রান করে রেকর্ড পার্টনারশিপের পর সাজঘরে ফিরেন রনি। অপরদিকে টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন লিটন। ৪১ বলে ৮৩ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে ১২তম ওভারে দলীয় ১৩৮ রানে সাজঘরে ফেরেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার।
শেষ দিকে সাকিব আল হাসান ও ব্যাটে ১৭ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ২০২ রানের বিশাল সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ।