নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিন ধাপে পাঁচ সিটি করপোরেশনের ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। সেক্ষেত্রে ঈদুল আজহার আগে মে থেকে জুনের মধ্যে গাজীপুর, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট ও খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১৫ মার্চ) কমিশনের ১৬তম সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।
ইসি সচিব বলেন, ইসির রোডম্যাপের আলোকে কোন কাজে কতটুকু অগ্রগতি তা কমিশনকে অবহিত করা হযেছে। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ, নতুন দল নিবন্ধন চলমান, নতুন সীমানার খসড়া প্রকাশ, পর্যবেক্ষক সংস্থার আবেদন যাচাই-বাছাই চলছে।
জাহাংগীর আলম বলেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার ও নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে কমিশন সভায় আলোচনা হয়েছে। সেক্ষেত্রে রোডম্যাপ ধরে অগ্রগতি জানানোর পাশাপাশি হাতে থাকা ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণে অর্থ ছাড়ের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ১ লাখ ১০ হাজার ইভিএম মেরামত করতে হবে।
তিনি বলেন, মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে- ১ লাখ ১০ হাজার মেশিনকে মেরামত করে আমরা আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ব্যবহার করতে পারবো, এ ব্যাপারে আপ্রাণ চেষ্টা করবো। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থপ্রাপ্তি সাপেক্ষে আমরা সংখ্যাটা (কটি ইভিএম সক্ষম ও কটি আসনে) ব্যবহার হবে তা চূড়ান্ত করতে পারবো। এটা কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।
এখন অর্থমন্ত্রণালয়ে অর্থ ছাড়ে চিঠি দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, অর্থ ছাড়ে সম্মতি দেয় তাহলে পরবর্তী ধাপে আমরা জানাতে পারবো- আসলে কোন কোন আসনে কতটি নির্বাচনী এলাকায় ইভিএম ব্যবহার করতে পারবো। সর্বোচ্চ ৬০-৭০ টি আসনে সম্ভব কি না জানতে চাইলে সচিব জানান, বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত হবে।
তিনি বলেন, সংখ্যা নির্ভর করতে ইভিএম মেশিনের ওপর। যেগুলো আছে এরমধ্যে কতগুলোকে সক্ষম ব্যবহারযোগ্য করে তুলতে পারবো, তার ওপর নির্ভর করছে কতটি আসনে ইভিএম ভোট হবে।… আমাদের সক্ষমতা কমিশন সবসময় বলেছে, ৭০-৮০ আসনে সর্বোচ্চ ইভিএম ব্যবহার করা যাবে। এটা আপ্রাণ চেষ্টা করা হবে, এ সিদ্ধান্ত থেকে আমরা সরে আসিনি।
যতদূর সম্ভব বেশি সংখ্যক আসনে ইভিএমে ভোট করা হবে। নির্বাচনী এলাকার ভোটার সংখ্যা একেক জায়গায় একেক রকম, যদি ছোট এলাকা নেওয়া যায় তাহলে বেশি আসন নেওয়া যাবে। বড় এলাকা হলে কম আসনে ইভিএম করতে হবে।
ইসি সচিবালয় এসব বিষয়ে চূড়ান্ত করে কমিশন সভায় উপস্থাপন করবে।
তিন ধাপে পাঁচ সিটিতে ভোট করার সিদ্ধান্ত:
সংসদ নির্বাচনের আগে তিন ধাপে পাঁচ সিটি করপোরেশনের ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। সেক্ষেত্রে ঈদুল আজহার আগে মে থেকে জুনের মধ্যে গাজীপুর, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট ও খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান ইসি সচিব।
সচিব বলেন, নির্বাচন হবে জুনের পরে কোনটা কখন হবে তখন জানাবো। মে থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। এইচএসসি পরীক্ষা হবে সম্ভাব্য ৭ জুলাই থেকে। সেজন্যে এসএসসি পরীক্ষা শেষে ২৩ মে থেকে ২৯ জুনের মধ্যবর্তী সময়ের তিন ধাপে পাঁচটি সিটির ভোট করার বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে।
পাঁচ সিটি নির্বাচন সংসদ নির্বাচনের আগে করতে হবে। প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে- এপ্রিলে রমজান শেষে এসএসসি পরীক্ষা ২৩ মে পর্যন্ত, হিসাব অনুযায়ী ২৯ জুলাই ঈদুল আজহা উদযাপন করা হবে। ঈদুল আজহার আগে এবং এসএসসি পরীক্ষা শেষে এ মধ্যবর্তী সময়ে পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন আয়োজন করবো এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরবর্তীত তফসিলের সময় কোন টা কোন তারিখে হবে তা বিস্তারিত জানানো হবে। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে উল্লেখ করেন সচিব।
মেয়াদ বিবেচনা করে এপ্রিলের মধ্যে তফসিল করা হবে। সেক্ষেত্রে ইভিএমে সব নির্বাচন হবে। সিসি ক্যামেরা রাখার বিষয়ে পরিকল্পনা থাকলেও তা করা হবে কিনা ওই সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ঈদুল ফিতরের পরে দুবাইয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)
ইসি সচিব জানান, ঈদুল ফিতরের পরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে টিম পাঠিয়ে এনআইডির প্রাইলট প্রকল্প চালু করা হবে।
তিনি জানান, প্রত্যেক ভোটার সংশ্লিষ্ট দূতাবাসে এসে আবেদন করবে, এরপর আবেদন দেশে স্থানীয়ভাবে যাচাই-বাছাই ও তদন্ত হবে। পরে দূতাবাসে এসে ফিঙ্গার প্রিন্ট ও অন্যান্য তথ্য নেওয়া হবে। দেশে নির্বাচন কমিশন স্মার্ট কার্ড তৈরি করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসে পাঠানো হবে। সেখান থেকে এনআইডি নিতে পারবেন প্রবাসী বাংলাদেশি।