লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে মাছ ও মাদক কারবারির টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বে ডেকে নিয়ে মো. নিশানকে হত্যার দায়ে তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একইসঙ্গে প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন।
লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জসিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নিশান ও আসামিরা বন্ধু ছিলেন। মাছ ও মাদক ব্যবসার টাকা নিয়ে তার সঙ্গে আসামিদের দ্বন্দ্ব ছিল। এর জের ধরেই নিশানকে হত্যা করা হয়। আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রামণিত হয়েছে। রায় ঘোষণার সময় আসামি নুর মোহাম্মদ ছৈয়াল ও নোমান হোসেন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। অপর আসামি আব্দুল্লাহ প্রকাশ জাইল্লা আব্দুল্লাহ পলাতক রয়েছে।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের চরকাছিয়া গ্রামের ওসমান গণি ছৈয়ালের ছেলে নুর মোহাম্মদ, একই এলাকার খোরশেদ মোল্লার ছেলে নোমান ও একই ইউনিয়নের চরলক্ষ্মী গ্রামের সেকান্দার আলী সর্দারের ছেলে আব্দুল্লাহ।
আদালত ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, নিশান লক্ষ্মীপুর পৌরসভার পশ্চিম লক্ষ্মীপুর এলাকার আবদুল বারেকের পালকপুত্র। তিনি স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে রায়পুরের চরকাছিয়া গ্রামে বসবাস করতেন। তিন ওই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা ছিলেন। আসামিদের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব ছিল। এজাহারে নিশানকে কৃষক বলা হলেও তার নির্দিষ্ট কোনো পেশা ছিল না। বন্ধুদের সঙ্গে তিনি মাদক ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ৬ জানুয়ারি রাতে আসামিরা তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান। এরপর ওই রাতে তিনি আর ঘরে ফেরেননি। পরদিন নিশানের স্ত্রী বিউটি আক্তার আসামিদের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ করেন। সেখানে আসামিদের খোঁজও পাননি তিনি।
এদিকে ৮ জানুয়ারি আসামি নোমান নিশানের স্ত্রীর মোবাইল ফোনে কল দিয়ে জানান ‘তাকে (নোমান) যেন বিপদে না জড়ানো হয়।’ পরে একইদিন বিকেলে বিউটিকে প্রতিবেশী বিল্লাল হোসেন বলেন- চরকাছিয়া গ্রামে নিশানের গলায় ফাঁস লাগানো মরদেহ পড়ে আছে। ঘটনাস্থল গিয়ে স্বামীর মরদেহ শনাক্ত করেন তিনি। পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। একইদিন নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে রায়পুর থানায় তিনজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত তিনজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। আসামিরা ভিকটিমকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতেই গলায় ফাঁস দিয়ে রাখেন।
২০২১ সালের ৩১ আগস্ট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নোয়াখালী কার্যালয়ের পরিদর্শক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম তিন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে আজ রায় দেন।