রাজশাহী মহানগরীর একমাত্র নারী সংবাদপত্র বিক্রেতা দিল আফরোজ খুকি (খুকুমনি নামেই বেশি পরিচিত)। বয়স প্রায় ৬২ বছর। এ বয়সেও হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতেন তিনি। নিজে অনেক কষ্টে জীবনযাপন করলেও তার উপার্জিত অর্থ থেকে বিভিন্নজনকে সহায়তা দিতেন খুকি।
২০২০ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুকির জীবন-সংগ্রামের একটি ভিডিও প্রকাশ পায়। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসে। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জেলা প্রশাসন খুকির পাশে দাঁড়ায়। ২০২০ সালে শ্রেষ্ঠ জয়িতার পুরস্কার পান দিল আফরোজ খুকি।
তবে সেই খুকুমনি এখন ভালো নেই। অসুস্থতার কারণে মিশনারিজ অব চ্যারিটি আশাদান মাদার তেরেজার আশ্রমে তাকে রাখা হয়েছে। সেখানে তার চিকিৎসা চলছে। এরআগে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রামেক হাসপাতাল থেকে তাকে মিশনারিজ অব চ্যারিটি আশাদান মাদার তেরেজার আশ্রমে রাখা হয়।
তবে তার অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন। স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগবে। মিশনারিজ অব চ্যারিটি আশাদান মাদার তেরেজার আশ্রমের সিস্টার জুয়ানে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘খুকুমনি অনেকদিন ধরেই হাসপাতালে আছেন। চিকিৎসায় সমস্যা হচ্ছে বলে আমরা শুনেছিলাম। রাজশাহী সমাজসেবা অধিদপ্ততের মাধ্যমে আমাদের কাছে অনুরোধও করা হয়। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে তাকে এখানে আনা হয়েছে।’
জুয়ানে আরও বলেন, ‘খুকুমনিকে এখানে আনার পর আমরা তাকে সেবা দিচ্ছি। তার পায়ে ও কোমরে ক্ষত আছে। সেগুলো ড্রেসিং করছি। তিনি হালকা হালকা দেখতে পারেন। মাঝে মাঝে তাকান। আবার শুয়ে থাকেন। তাকে যেহেতু দেখার কেউ নেই তাই আমরা তাকে এখানে রেখেছি।’
‘এখানে একজন পুলিশ সদস্য নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন। তিনি মাঝে মধ্যে ডাক্তারও নিয়ে আসেন। আমাদের এখানে তার যত্ন নেওয়া হচ্ছে। নিয়মিত ওষুধ দেওয়া ও খাওয়ানোর কাজ চলছে,’ যোগ করেন আশ্রমের সিস্টার জুয়ানে।
গত ১৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকায় খবরের কাগজ বিক্রি করার সময় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন খুকি। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের নগর স্পেশাল ব্রাঞ্চের কনস্টেবল শফিকুর আলম তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে খুকি দুইদিন ধরে কোনো শয্যা পাননি। হাসপাতালের বারান্দায় তার চিকিৎসা চলছিল।
এরপর ১৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রাজশাহী সিটি মেয়রের স্ত্রী শাহীন আকতার রেণী তার সঙ্গে দেখা করতে যান। তিনি খুকির চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং শয্যার ব্যবস্থা করে দেন। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ২২ ডিসেম্বর তাকে রামেক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউতে) পাঠানো হয়।
সেখান থেকে ৭ জানুয়ারি সাধারণ ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। এরপর ১৯ ফেব্রুয়ারি রামেক হাসপাতাল থেকে মিশনারিজ অব চ্যারিটি আশাদান মাদার তেরেজার আশ্রমে পাঠানো হয় খুকুমনিকে।