বর্তমান সরকারের মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীতকরণের চ্যালেঞ্জ উত্তরণ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক রাখতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের মতো জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব ভবনে নির্মাণ সংশ্লিষ্ট খাতগুলোর সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আয়োজিত প্রাক বাজেট আলোচনায় এ মন্তব্য করেন তিনি।
আলোচনা সভায় বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটে নির্মাণসামগ্রীর দাম অস্বাভাবিক হয়ে গেছে উল্লেখ করে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এ প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান ব্যবসায়ীদের বলেন— দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থায় আমার কাছে যখন আসেন তখন আমাদেরও তো দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়, তাই না। আমাকে রেভিনিউ কালেক্ট করতে হবে কত তা বলা হয়েছে। দেশের উন্নয়নের জন্য আমাদের টাকা দরকার তা রেভিনিউ সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। আমাদেরও তো দেয়ালে পিঠ ঠেকে আছে।’
নির্মাণসামগ্রীর সেক্টরগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানে যৌক্তিক সহায়তা দরকার বরাবরই আমরা করেছি। সবারই পিঠই দেয়ালে ঠেকে গেছে। যারা ব্যবসা করছেন তাদের সবারই পিঠ দেয়ালে ঠেকানো।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের এ সমস্যা শুধু কাস্টমস, ভ্যাটের জন্য নয়। সমস্যাটা অন্যভাবে তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের উচ্চমূল্য, আমাদের ডলার ক্রাইসিস। যখনই সেগুলোকে এড্রেস করতে পারেন না, মুক্তির কোনো পথ নেই। তখনই আমাদের (এনবিআর) কাছে আসেন। আপনাদের ক্রাইসিস আমরা ফিল করি। আপনাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।
নির্মাণ সংশ্লিষ্ট খাতগুলোর ২৫টি সংগঠনের মধ্যে এদিন চারটি সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।আলোচনা সভায় বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরে সংগঠনগুলো।
এরমধ্যে বাংলাদেশ অটো ব্রিকস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন, অটো ব্রিকস প্রতিষ্ঠানগুলো ভ্যাট মওকুফের দাবি জানিয়ে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়ের ওপর শূন্য দশমিক ৬০ শতাংশ টার্নওভার কর ও কাঁচামাল ক্রয়ের ক্ষেত্রেও উৎসে কর এ খাত থেকে অব্যাহতির কথা জানিয়েছে।
বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমএ) জানায়, প্রতি মেট্রিক টন সিমেন্ট ক্লিংকারের কাস্টমস ডিউটি ৫০০ টাকা। এই ডিউটি প্রতি মেট্রিক টনে ২০০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে তারা। সংগঠনটির প্রস্তাবে জানানো হয়, ক্ষেত্রবিশেষ অগ্রিম আয়করের হার ২ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত দিতে হয়। এ হার শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ করার দাবি জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রস্তাবে জানানো হয়, স্থানীয় পর্যায়ে স্ক্রাপ ক্রয়ের ওপর বর্তমানে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ অগ্রিম কর কাটা হয়। এ হার শূন্য করতে হবে। বিলেট বিক্রয়ের ক্ষেত্রে অগ্রিম কর শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করা আছে। তবে, এ অগ্রিম কর প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। রড বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ২ শতাংশ টিডিএস নির্ধারিত আছে, যা এক শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব সংগঠনটির।
বাংলাদেশ স্টিল মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন তাদের প্রস্তাব জানায়, বর্তমানে করপোরেট কর ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এ হার ২৫ শতাংশ করার আহ্বান জানাচ্ছি। রি-ফ্যাক্টরি ব্রিকস, অন্যান্য রি-ফ্যাক্টরি সিরামিক গুডস, আয়রন ও স্টিল সামগ্রীতে ভ্যাট, অগ্রিম কর মওকুফ করার প্রস্তাব জানানো হয়েছে।