প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা এলাকা এইচআইভি/এইডস, হেপাটাইটিস সি ও ডিপথেরিয়া রোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এসব রোগে এখন পর্যন্ত ৭১০ জন শনাক্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৬১২ জনই রোহিঙ্গা। গত বছরের ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬১ রোহিঙ্গা এইচআইভি/এইডসে মারা গেছেন।
বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে উত্থাপিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে প্রতিদিন ৯৫ শিশু জন্মগ্রহণ করে। ২০২৫ সালে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ১২ থেকে ১৩ লাখ পর্যন্ত বাড়তে পারে। এছাড়া কক্সবাজারে বিভিন্ন হোটেলে পাঁচ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা নারী দেহ ব্যবসায় সক্রিয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আরসা ও তিনটি সন্ত্রাসী গ্রুপসহ সাতটি ডাকাত দল রোহিঙ্গা এলাকায় সক্রিয়। এদের মধ্যে বেশিরভাগ ক্যাম্পের ওপর আরসার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। জিরো লাইনে অবস্থিত তমব্রু কোনাপাড়া ক্যাম্পটিতে নিয়মিত টহল ও নজরদারি জোরদার করতে না পারার কারণে সেখানে আরসার সাংগঠনিক কার্যক্রম, প্রশিক্ষণ, মাদক চোরাচালান ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ১০টি দুর্বৃত্ত দল সক্রিয়। এদের মধ্যে আরসা সক্রিয় উখিয়া, বালুখালী, পালংখালী, হোয়াইক্যংয়ে; আরএসও ও মাস্টার মুন্না দল উখিয়া, পালংখালীতে; ইসলামী মাহাজ ও জাবু ডাকাত দল হোয়াইক্যংয়ে ও নয়াপাড়া ক্যাম্পে চাকমা ডাকাত দল, নবী হোসেন ডাকাত দল, পুতিয়া ডাকাত দল, সালমান শাহ ডাকাত দল, খালেক ডাকাত দল সক্রিয়।
বেশিরভাগ ক্যাম্পের ওপর আরসার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে উল্লেখ করে এতে আরও বলা হয়, আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে আরসা ও নবী হোসেন ডাকাত দল প্রায়ই মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আরসার উপস্থিতি ও তাদের সন্দেহভাজন কার্যক্রম নিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরি করেছে।
প্রতিবেদনে ২০২১ ও ২০২২ সালে সংঘটিত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরা হয়। এদের সার্বিক অপরাধ কিছু কমেছে বলে প্রতীয়মান হয়। তবে এ সময়ে বেড়েছে হত্যাকাণ্ড। ২০২১ সালে যেখনে ২২টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, ২০২২ সালে তা বেড়ে হয় ৩২টি।
এদিকে ২০২১ সালের চুরি-ডাকাতির ঘটনা ৭৭টি থেকে কমে ২০২২ সালে ৭৫টি, গোলাগুলির ঘটনা ৫১টি থেকে ১৮টি, অপহরণ ঘটনা ১৭৩টি থেকে কমে ৮৬টি, অন্তর্কোন্দল ১১টি থেকে কমে একটি, মাদকের ঘটনা ২৬৮টি থেকে ২৪৯টি এবং অন্য অপরাধ ৫৬৭টি থেকে কমে ৫৫৩টি হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, জানুয়ারি ২০২১ থেকে ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত ২২২টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে ৯৯টি দুর্ঘটনাজনিত। ৬০টি নাশকতামূলক ও ৬৩টির কারণ জানা যায়নি।
কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান, মো. ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ ও মো. নাসির উদ্দিন অংশ নেন।