পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে আওয়ামী লীগ সারা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, একটি রাজনৈতিক দল যখন পাল্টা কর্মসূচি দেয় তখন বুঝতে হবে তারা একেবারেই দেউলিয়া হয়ে গেছে। তাদের শক্তি আজ শূন্যের কোঠায়। ভীত হয়ে তারা পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে। তাদের এ ধরনের পাল্টা কর্মসূচি সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে কেউ গ্রহণ করে না।
রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেন, আমরা যে দিন কর্মসূচি দিয়ে থাকি সে দিন তারা পাল্টা কর্মসূচি দেয়। এর মাধ্যমেই প্রমাণিত হয় তারা দিশেহারা হয়ে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, গ্যাস-বিদ্যুৎসহ নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ এবং ১০ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গতকাল (শনিবার) ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচিতে বিপুলসংখ্যক জনগণ অংশগ্রহণ করেছে। গত কয়েকদিন গ্রেপ্তার ভয়-ভীতির পরও দেশবাসী কর্মসূচি পালন করেছে।
তিনি বলেন, চলমান আন্দোলন কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত করতে বর্তমান ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তিপূর্ণ পদযাত্রাকে বানচাল করতে দলীয় সন্ত্রাসী এবং কিছু সংখ্যক পুলিশ লেলিয়ে দিয়েছে। গতকাল দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির পদযাত্রায় আওয়ামী সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হামলা ও গুলিবর্ষণ করে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, নরসিংদীর পলাশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খানের মিছিল থেকে ব্যানার ছিনিয়ে নেয়, এছাড়া যশোহরে ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ অমিত-এর ওপর ডিবি পুলিশ বর্বোরচিত হামলা চালায়। এসময় বিএনপি নেতাকর্মীদের বেধড়ক লাঠি পেটা করে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় পাঁচ শতাধিক নেতার্মী আহত হয়েছে। শতাধিক বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠা ভাঙচুর এবং লুটপাট করেছে তারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দুই শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, বিএনপি জনগণের দাবি নিয়ে যখনি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিচ্ছে ঠিক সেই মুহূর্তে একই স্থানে বর্তমান শাসক গোষ্ঠী পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে সন্ত্রাসকে উসকে দিয়ে দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে চায়।
জনগণের রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ ব্যয় করে পুলিশি পাহারায় শান্তি সমাবেশের নামে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র বানানোর সব প্রক্রিয়া চলছে দাবি করে তিনি বলেন, গতকাল সারা দেশে বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের এমপিদের প্রত্যক্ষ নির্দেশে কোথাও কোথাও সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিএনপিসহ নিরীহ জনগোষ্ঠীর ঘরবাড়ি, জানমালের ওপরে হামলা করেছে, যার দৃশ্য আপনার নিজেরাই অবলোকন করেছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশি হামলা সত্ত্বেও গণতন্ত্রকামী জনতা দানবীয় সরকারের রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে রাজপথে এসে কর্মসূচি সফল করে প্রমাণ করেছে, এ সরকার জনবিচ্ছিন্ন। যুগে যুগে কোনো অত্যাচারী সরকার জুলুম, নির্যাতন করে টিকে থাকতে পারেনি, এই সরকারও পারবে না।
তিনি বলেন, গত ১৪ বছর ৫০ লাখ নেতাকর্মীদের বানোয়াট নামে মামলা করে এবং সহশ্রাধিক নেতাকর্মীকে খুন-ঘুম করেও বিএনপির নেতাকর্মীসহ দেশের গণতন্ত্রাকামী জনগণকে এই ফ্যাসিস্ট সরকার দমাতে পারেনি। তাই ভোটারবিহীন অবৈধ সরকারের বিদায় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। নির্যাতনের মাত্রা যত বাড়বে, সরকারের বিদায় ঘণ্টা ততই ত্বরান্বিত হবে। এখনও সময় আছে জনগণের ভাষা বুঝে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিয়ে অবিলম্বে সংসদ বাতিল করে পদত্যাগ করুন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশ্য করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, নিরীহ, নিরাপরাধ জনগণের ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন বন্ধ করুন। অত্যাচার-নির্যাতন বন্ধ করে গ্রেপ্তার রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে হবে। গ্রেপ্তার সব নেতাকর্মীর মুক্তি দাবি করছি। আহত নেতাকর্মীদের সুস্থতা কামনা করছি। এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত আওয়ামী সন্ত্রাসী ও আওয়ামী নামধারী প্রশাসনের কতিপয় চিহ্নিত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু ও সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স প্রমুখ।