গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সে (জিএইচআই) ১৯.৬ স্কোর নিয়ে ১২১টি দেশের মধ্যে ৮৪তম স্থানে অবস্থান করছে বাংলাদেশ।
বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড, ওয়েলথ হাঙ্গার হিলফ, হেলভেটস বাংলাদেশ এবং অ্যাকটেড যৌথভাবে প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
বৈশ্বিকভাবে ইয়েমেনের জিএইচআই স্কোর সর্বোচ্চ। ফলে দেশটি ক্ষুধা সূচকের উদ্বেগজনক বিভাগে রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ এ খাতে দৃশ্যমান উন্নতি দেখিয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে ২৫.৫ ভাগ উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। দরিদ্রবান্ধব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, পিতামাতার শিক্ষা লাভ, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন এবং জনসংখ্যাগত উন্নতি, সর্বোপরি ক্রমবর্ধমান পারিবারিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এ উন্নতির কারণ বলে বিবেচিত।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সময়ের সাথে সাথে বাংলাদেশ উন্নতি করলেও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, চরম আবহাওয়া, ভয়াবহ বন্যা এবং জলবায়ু সংকটের কারণে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা ক্রমশ হুমকির মুখে পড়ছে।
প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষ্যে গতকাল কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশে (কেআইবি) আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস, বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের (বিএনএনসি) মহাপরিচালক ড. হাসান শাহরিয়ার কবির এবং কৃষি গবেষণা পরিষদ বাংলাদেশের নির্বাহী সভাপতি ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার।
অনুষ্ঠানে ওয়েলথ হাঙ্গার হিলফ বাংলাদেশের হেড অব মিশন ফাতিমা আজিজোভা বলেন, সাম্প্রতিক যুদ্ধ, মহামারি এবং জলবায়ু পরিবর্তন লক্ষ লক্ষ মানুষের আর্থসামাজিক অবনতির অন্যতম কারণ। বাংলাদেশের জিএইচআই স্কোর অতীতের তুলনায় ভালো হয়েছে, উদ্বেগজনক মাত্রা থেকে মাঝারি মাত্রায় উন্নীত হয়েছে। তবে এটা স্পষ্ট যে বর্তমান খাদ্য ব্যবস্থা, দারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূর করার জন্য যথেষ্ট নয়। আমাদের অবশ্যই সকল স্তরে অধিকার ভিত্তিক খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এবং এটি অর্জনের জন্য, সরকার, এনজিও এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের অবশ্যই স্থানীয় জনগনকে কাজে লাগাতে হবে এবং তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে স্থানীয় নেতৃত্বকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। সেইসাথে মাল্টিস্টেকহোল্ডার প্ল্যাটফর্মগুলোকে সংগঠিত করে খাদ্য ও পুষ্টির নিরাপত্তাহীনতা এবং ক্ষুধা মোকাবিলায় নীতি নির্ধারকদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর মনীশ কুমার আগরওয়াল বলেন, বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা এবং জিএইচআই অনুযায়ী পুষ্টিসহ বেশকিছু ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি করেছে। কিন্তু কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েই গেছে। ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধির কারণে মৌলিক খাবারের সংস্থানও ইতোমধ্যেই দেশ ও বিশ্বের অনেক দরিদ্র পরিবারের নাগালের বাইরে চলে গেছে। স্থানীয় সরকার ও সুশীল সমাজের শক্তিশালী পারস্পরিক সহযোগিতা ও সক্রিয় অংশগ্রহণ খাদ্য ব্যবস্থার ইতিবাচক রূপান্তরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকার, এনজিও এবং অন্যান্য সেক্টরসহ আমাদের সকলকে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা উন্নত করার জন্য একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
হেলভেটাস বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর শামীম আহমেদ বলেন, খাদ্যের প্রাপ্যতা সবসময় মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা সীমিত করার প্রধান কারণ নয়। তাই, সকল স্তরের সরকারি ও বেসরকারি দায়িত্বশীলদের অবশ্যই খাদ্য ব্যবস্থার পরিবর্তনের এই প্রচেষ্টার কেন্দ্রে অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসন ও জবাবদিহিতা রাখতে হবে এবং খাদ্যের অধিকারকে সম্মান, সুরক্ষা এবং পূরণ করার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।