কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে বারবার পিছিয়ে আসা দলের তকমা জুটছে বিএনপির। সবশেষ গত ১০ ডিসেম্বরের ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের মাধ্যমে যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা করে দলটি। এর পর গণমিছিল, বিক্ষোভ সমাবেশের মতো ছোটখাটো কর্মসূচি পালন করলেও জমাতে পারছে না আন্দোলন।
দলটির দায়িত্বশীল নেতারা বলেছেন, চলমান কর্মসূচির মাধ্যমে কর্মীদের চাঙা রাখা হচ্ছে। ধাপে ধাপে সরকার পতনের জন্য কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। পাশাপাশি থাকবে নির্বাচনের প্রস্তুতি।
বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। দলীয় সূত্র জানায়, সরকার পতনের আন্দোলনকে ধাপে ধাপে চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে বিএনপি। যুগপৎ আন্দোলনে ধাপে ধাপে কঠোর কর্মসূচি আসছে। তবে কর্মসূচির ব্যাপারে খুবই সতর্ক এবং কৌশলী তারা। বিএনপির কর্মসূচির সময়ে আওয়ামী লীগ উসকানিমূলক পাল্টা কর্মসূচি দিলে আপাতত সেটা এড়িয়ে চলার নীতি নিয়েছে দলটি।
দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, নেতাকর্মীরা এখন আন্দোলনমুখর। শান্তিপূর্ণ উপায়ে দাবি আদায়ের পক্ষে আছে। যদি শান্তিপূর্ণ উপায়ে দাবি আদায় না হয় তাহলে কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার বিকল্প নেই বলে মনে করেন তারা। আমরা আশা করবো সরকার শান্তিপূর্ণ উপায়ে জনগণের দাবি মেনে নেবে। না হলে দাবি আদায়ের জন্য যা যা করণীয় সব হবে। সবই হবে সরকারের আচরণের ওপর নির্ভর করে।
কবে নাগাদ কঠোর কর্মসূচিতে যেতে চাইছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, একদিনে তো আন্দোলন হয় না। ধাপে ধাপে আন্দোলন কঠোর হয়। সময়ের ওপর নির্ভর করে।
কোন ধরনের কর্মসূচিকে কর্মীরা কঠোর কর্মসূচি মনে করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, হরতাল, অবরোধ, সচিবালয় ঘেরাও, সংসদ ভবন ঘেরাও, নির্বাচন কমিশন ঘেরাও, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও, রাষ্ট্রপতির কার্যালয় ঘেরাও, এসব কার্যালয়ের সামনে গণঅবস্থানের মতো কর্মসূচিকে নেতাকর্মীরা কঠোর ও কঠিন কর্মসূচি হিসেবে দেখছেন।
সূত্র জানায়, আগামী জুলাই-আগস্ট নাগাদ বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ, মানববন্ধন, লংমার্চ, রোডমার্চ প্রভৃতি কর্মসূচিতে সীমাবদ্ধ থাকবে বিএনপি। এরপর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে হরতাল, অবরোধ, সংসদ ঘেরাও, নির্বাচন কমিশন ঘেরাও, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওয়ের মতো কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার চিন্তা রয়েছে।
আপাতত ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন মহল্লায় বিক্ষোভ-সমাবেশ কর্মসূচির পাশাপাশি সারাদেশের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে সমাবেশ করবে বিএনপি। এসব চলবে আগামী জুন পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যেই দল পুনর্গঠনের পাশাপাশি চলবে নির্বাচনী প্রস্তুতি।
বিএনপির আরেকটি সূত্র বলছে, আগামী মে মাস থেকে বিএনপির দাবি আদায়ের আন্দোলনে বুদ্ধিজীবী পেশাজীবীদের প্রকাশ্যে নামানোর চেষ্টা করবে। বুদ্ধিজীবী পেশাজীবীদের প্রকাশ্য সমর্থন পেলে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে দলটির।
আন্দোলন-কর্মসূচি বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু জাগো নিউজকে বলেন, আমরা অনেক হিসাব-নিকাশ করেই এগোচ্ছি। আন্দোলন কাকে বলে ও কত প্রকার তা সরকার অচিরেই দেখতে পাবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেন, সাময়িকভাবে আন্দোলনের গতি কিছুটা ধীরে চললেও সামনের দিনে তা বাড়বে। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের পথ থেকে নেতাকর্মীরা যেন বিচ্যুত না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে সতর্কতার সঙ্গে আমাদের কর্মসূচি দিতে হচ্ছে। তবে সরকার পতনের কঠোর কর্মসূচি অবশ্যই আসবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছি। এখন কঠোর কর্মসূচিতে না গেলেও পরিস্থিতি কখন আমাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে বাধ্য করে তা কেউ বলতে পারবে না। রাজনীতিতে ছোট ছোট কর্মসূচির মাধ্যমে বড় আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়।