রংপুরের বদরগঞ্জে গ্রাম্য সালিশে দুই নারীকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আয়নাল হকসহ তিনজনকে ১৪ বছরের সশ্রম এবং আরও ৬ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-২ এর বিচারক রোকনুজ্জামান এ রায় প্রদান করেন।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- ১০নং মধুপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আয়নাল হক ও তার সহযোগী মহুবুল ও চিকনা এনামুল। দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তাদেরকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া অপর ৬ আসামি ইলিয়াছ, বাবলু, সেকেন্দার মণ্ডল, রউফ মণ্ডল, মোটা এনামুল ও মজম আলীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করেছেন আদালত।
মামলার বিবরণ সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ২৫ জুন বদরগঞ্জ উপজেলার তৎকালীন মধুপুর ইউপি চেয়ারম্যান আয়নাল হকের নির্দেশে অন্য আসামিরা রাজারামপুর গ্রামের হ্যাপী আখতার ও শাহিদা বেগমকে চরিত্রহীন অপবাদ দিয়ে বাড়ি থেকে মারতে মারতে তুলে নিয়ে আসে। পরে স্থানীয় কাশিপুর লিচু বাগান এলাকার একটি মাঠে গ্রাম্য সালিশের নামে ইউপি চেয়ারম্যান আয়নাল হকের উপস্থিতিতে দুই নারীর হাত-পা বেঁধে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করা হয়। এসময় কয়েক দফা জ্ঞান হারিয়ে ফেললেও তাদের ওপর নির্যাতন অব্যাহত রাখা হয়।
এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামি আয়নাল হকসহ ৫৬ জনকে আসামি করা হয়। পুলিশ তদন্ত শেষে ৫৬ জন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এরই মধ্যে মামলার বিচারকার্য চলাকালীন দুই আসামি মারা যান।
এই মামলায় দীর্ঘ এগারো বছরে ১৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা শেষে আজ বুধবার আসামি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আয়নাল হক, মহুবুল ও চিকনা এনামুলকে দোষী সাব্যস্ত করে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেন বিচারক রোকনুজ্জামান। আরও ছয় আসামিকে ৩ বছর করে কারাদণ্ড প্রদান করেন। সেইসঙ্গে বাকি ৪৫ আসামিকে ওই মামলা থেকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন।
এ বিষয়ে নারী ও শিশু দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত-২ এর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসেন তুহিন জানান, আদালতে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আসামিদের সাজা দেওয়া হয়েছে। এ রায়ে বাদীপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এই রায়ের মাধ্যমে আদালত বার্তা দিলেন, নারীদের প্রতি সহিংসতা করলে তার শাস্তি পেতেই হবে।
ভুক্তভোগী দুই নারী হ্যাপি আখতার ও শাহিদা বেগম রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। একইসঙ্গে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।