বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার একটি ইউনিয়নে স্থগিত হওয়া নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে দুজন নিহত এবং অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় ১০-১২টি বাড়ি ও দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়েছে। রোববার ভোর ৪টার দিকে উপজেলার দক্ষিণ উলানিয়া ইউনিয়নের কালীগঞ্জ ও সুলতানি গ্রামে ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
নিহত দুজন হলেন সাইফুল সরদার (৩০) ও সাঈদ চৌধুরী (২২)। সাইফুল আশা গ্রামের আ. জব্বার সরদারের ছেলে এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী রুমা বেগমের সমর্থক। অপর দিকে সাঈদ চৌধুরী আওয়ামী লীগের প্রার্থী মিলন চৌধুরীর চাচাতো ভাই। তিনি বেলা ১১টার দিকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।
স্থানীয় কয়েকজনের ভাষ্য, গত বছর মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার সাবেক উলানিয়া ইউনিয়নটি ভেঙে উত্তর ও দক্ষিণ উলানিয়া নামে পৃথক দুটি ইউনিয়ন করা হয়। ইউনিয়ন বিভক্তির বিরুদ্ধে স্থানীয় এক ব্যক্তি হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করলে রিটের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন গত বছরের ৬ ডিসেম্বর স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণার পর থেকে দক্ষিণ ও উত্তর উলানিয়া দুটি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে বেশ কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর ধারাবাহিকতায় আজ ভোর ৪টার দিকে মেহেন্দীগঞ্জ দক্ষিণ উলানিয়ার সুলতানি গ্রামে ওই হামলার ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের ভাষ্য, গতকাল শনিবার গভীর রাতে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী মিলন চৌধুরীর কয়েক শ কর্মী-সমর্থক দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে স্থানীয় কালিগঞ্জ বাজার সেতু এলাকায় কয়েকটি দোকানে ভাঙচুর চালায়। পরে তারা সুলতানিয়া ও আশপাশের গ্রামে ঢুকে পড়ে। সুলতানিয়া গ্রামবাসী মসজিদের মাইকে গ্রামবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে হামলা প্রতিরোধের আহ্বান জানাতে থাকলে আশপাশের গ্রাম থেকে লাঠিসোঁটা নিয়ে অনেকে এগিয়ে আসে। এতে দুই পক্ষে সংঘর্ষ হয়। ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। এতে ঘটনাস্থলে সাইফুল ইসলাম নিহত হন। আহত হন উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন। এর মধ্যে গুরুতর আহত সাঈদ চৌধুরীকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।
দক্ষিণ উলানিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, ভোরে কয়েক শ লোক একত্র হয়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সুলতানি গ্রামসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে হামলা চালায়। হামলাকারীরা ওই এলাকার দোকানপাট ও বাড়ি ভাঙচুর করে। এলাকার বাসিন্দারা আত্মরক্ষার্থে প্রতিরোধ করতে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ঘটনার খবর পেয়ে আশপাশের গ্রামের লোকজন সুলতানি গ্রামে আসেন। এ সময় হামলাকারীদের আঘাতে পার্শ্ববর্তী আশা গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল সরদার (৩০) নিহত হন এবং কমপক্ষে ১০ জন আহত হন। হামলাকারীরা উলানিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, সম্প্রতি স্থগিত হওয়া উলানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া হামলাকারীরা আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মিলন চৌধুরীর লোক বলে দাবি করেছেন তিনি। তবে সাইফুলের স্ত্রী খাদিজা বেগম অভিযোগ করেন, উলানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থক স্থানীয় তারেক সরদারসহ তাঁর সমর্থকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী মিলন চৌধুরী, মিজান মোল্লা, নোমান মোল্লাদের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। এই বিরোধকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে একাধিক হামলা-মামলার ঘটনা ঘটেছে। এরই ধারাবাহিকতায় কালীগঞ্জ বাজার ও পাশের সুলতানি গ্রামসহ আশপাশের গ্রামে মিলন চৌধুরীর নেতৃত্বে অতর্কিত হামলা চালানো হয়। এ সময় হামলাকারীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে সাইফুল ইসলাম নিহত হন। হাবু সরদার, জহিরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এ সময় কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর করে মালামাল লুটের ঘটনা ঘটে।
আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী মিলন চৌধুরী বলেন, সংঘর্ষে গুরুতর আহত তাঁর চাচাতো ভাই সাঈদ চৌধুরীকে (২২) চিকিৎসার জন্য বরিশালে নেওয়ার পথে মারা গেছেন। মেহেন্দীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে দুজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। কয়েকটি বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দুই দিন আগে উত্তর উলানিয়া নির্বাচন নিয়ে হামলা-সংঘর্ষ হয়। এর আগে ৪ ডিসেম্বর ও ১৩ মার্চ দক্ষিণ উলানিয়ার প্রার্থী-সমর্থকদের মধ্যে বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। মিলন চৌধুরী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর সমর্থক হিসেবে পরিচিত। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী রুমা বেগম স্থানীয় সাংসদ পঙ্কজ দেবনাথের সমর্থক হিসেবে পরিচিত।