রাত পোহালেই শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বিজয়ের আগ মুহূর্তে পাকিস্তানিদের নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছিলেন বাংলার বুদ্ধিজীবীরা। দিবসটিতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রাজধানীর মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ ও মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে মানুষের ঢল নামবে। এসব বিষয় মাথায় রেখে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও ধোয়া-মোছার কাজের পাশাপাশি নিরাপত্তার বলয় তৈরি করা হয়েছে। যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ ও মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে তৈরি করা হয়েছে নিরাপত্তা বেষ্টনী।
বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস-২০২২ পালনের লক্ষ্যে জাতীয় কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে বুধবার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। পুষ্পস্তবক অর্পণ অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল। এই উপলক্ষে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ।
মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে দেখা গেছে, নিরাপত্তার খাতিরে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) জসিম উদ্দিন মোল্লা বলেন, যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এই এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতে এক কথায় সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও পুলিশ থাকবে। এমনকি লাইন মেইনটেইনের ক্ষেত্রেও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন।
মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের পুরো এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। স্মৃতিসৌধের মূল বেদি ও আশপাশের এলাকা পরিষ্কার করে রং করা হয়েছে। ওই এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কয়েকদিন ধরে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে সাধারণ মানুষের প্রবেশ বন্ধ রয়েছে।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাইফুজ্জামান চুন্নু বলেন, মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের পুরো এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি নানা ধরনের রং করা হয়েছে। বুধবার সকাল ৭টায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এখানে শ্রদ্ধা জানাবেন। এসব বিষয় মাথায় রেখে আমরা পুরো এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেছি।
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাতের আঁধারে জাতির মেধাবী সন্তানদের বেছে বেছে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এরপর থেকে প্রতিবছর শোকগাঁথায় এই দিনটিকে স্মরণ করে পুরো জাতি। এদিন মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের পাশাপাশি রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধেও শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। এটি বাঙালি জাতির জীবনে একটি বেদনার দিন। দিবসটি উপলক্ষে মঙ্গলবার দিনগত রাত ১২টার দিকে বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে স্মৃতিসৌধে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হবে।
গণপূর্তের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (ধানমন্ডি) মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া বলেন, সারা বছরই এখানে কাজ করি। সাধারণ মানুষের যাতে কোনো সমস্যা না হয় সে জন্য আমরা এখানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখি। তবে ১৪ ডিসেম্বর উপলক্ষে রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ আরও ভালোভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। দিবসটির ভাব-গাম্ভীর্য অক্ষুণ্ন রাখতে যে যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তা নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি। আমাদের মূল অনুষ্ঠান রায়েরবাজার ও মিরপুরে। সেখানে আমরা তিন স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি। পোশাকধারী পুলিশ, সাদা পোশাক ও সিভিল পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যে যে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার তা নেওয়া হয়েছে। তবে সবকিছু তো মুখে বলা যাবে না।
দিবসটিকে ঘিরে কোনো নাশকতার আশঙ্কা আছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে আজিজুল হক বলেন, এ ধরনের কোনো খবর আমাদের কাছে নেই। তবে কোনো আশঙ্কাকে আমরা উড়িয়ে দেবো না। সব ধরনের আশঙ্কার কথা মাথায় রেখে সে অনুযায়ী নিরাপত্তা বলয় প্রস্তুত করা হয়েছে।