বিএনপির এমপিদের ছেড়ে দেওয়া আসনগুলোতে ‘শূন্য’ ঘোষণার ৯০ দিনের মধ্যে ভোটগ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর। রোববার (১১ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা মিডিয়ায় দেখেছি, ওনারা পদত্যাগ করেছেন। আসন শূন্য হওয়ার কোনো গেজেট পাইনি। যদি সত্যিকার অর্থেই ওনারা পদত্যাগ করে থাকেন, তাহলে আসন শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হবে। স্পিকার বা তার অনুপস্থিতিতে যদি ডেপুটি স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র দেন, তখন গেজেট হবে। গেজেট হলে তারপর আমাদের কাজ শুরু হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত গেজেট না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কাজ শুরু করার সুযোগ নেই। কোনো সংসদ সদস্য পদত্যাগ করলে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে এটাই ইসির দায়িত্ব।’
উপ-নির্বাচন হলে কয়েকমাসের মধ্যেই আবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন, এ বিষয়টি সামনে আনলে এই কমিশনার বলেন, ‘এটা তো সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। আসন শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। ৯০ দিন তো আর যাবে না। গেজেট পাওয়ার পর দেখা যাবে যে দুই মাস লাগতে পারে, দেড় মাসও লাগতে পারে। নির্বাচন করতেই হবে। কারণ আসন শূন্য রাখার তো কোনো সুযোগ নেই।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, ‘এখন বিষয় হলো সুষ্ঠু নির্বাচন করাটা যদি মূল উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলে আমি বলব ইভিএম ভালো। এ দেশের নির্বাচনে যারা হেরে যান, তারাই বলেন যে কারচুপি হয়েছে। কাজেই কেউ যদি হেরে যান বলার সুযোগ থাকবে না, কারচুপি হয়েছে। ইভিএমে যত নির্বাচন করেছি, হেরে যাওয়ার পর দেখেন কোনো অভিযোগ আছে কি না। কিন্তু যেখানে ব্যালটে নির্বাচন হয়, সেখানে ভোট ঠিকমত করেনি, ভোট আগে দেয়, পরে দেয়; নানা কথা হয়। ইভিএমের প্রভাব বিস্তার করার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের সামর্থ্য থাকলে ৩০০ আসনেই ইভিএমে নির্বাচন করতাম।’
ইভিএম নিয়ে বিএনপির অনাস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওনারা আগে থেকেই অনাস্থার কথা বলেছেন। আবার অনেকের আস্থা আছে। আমাদের কাজ হলো সবকিছু বিবেচনা করে যেটা সঠিক মনে হবে সেটাই সিদ্ধান্ত নেওয়া। ৩৯টি নিবন্ধিত দল আছে। সবাই যদি ইভিএম বাতিল চায় যে প্রক্রিয়া আছে সেটাই হবে। আর একটা দুইটা দল যদি না চায় অন্যরা যদি চায় তাহলে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যেটা হয়, সেটাই করতে হবে।’
বিএনপির করা বর্তমান কমিশনের পদত্যাগের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন চাহিদা থাকতে পারে। আমরা কাজের মাধ্যমে আস্থা অর্জনের চেষ্টা করব। আমাদের কোনো পক্ষপাতিত্ব আছে কি না সেটা দেখেন। ইকুয়াল আচরণ করছি কি না সেটা দেখেন। একটা দল আরেকটা দলের কাছে চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে যদি নির্বাচন কমিশনকে টার্গেট করা হয়, সেটা তো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমাদের উদ্যোগ সবসময় থাকবে, যখন যখন মনে হবে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার দরকার, তখন তো অবশ্যই করব।’
এমপিদের পদত্যাগ নিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘তাদের পদত্যাগ ভিন্ন ইস্যু। যতটা না নির্বাচন সম্পর্কিত, ততটা রাজনৈতিক। এটা স্বাভাবিক হিসেবেই দেখছি। একজন সংসদ সদস্য তিনি পদত্যাগ করতে পারেন। এটা সংবিধানে বলা আছে, কীভাবে পদত্যাগ করবেন সেটা বলা আছে। এখানে ইসির উৎসাহ, নিরুৎসাহিত করার কোনো সুযোগ নেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘নিবন্ধিত দল হিসেবে আমরা যেকোনো সময় ওনাদের সঙ্গে আলোচনা করতে চাইতে পারি। ওনারাও চাইতে পারেন। আমাদের যখন যে দায়িত্ব পালন করা উচিত তখন সেভাবেই দায়িত্ব পালন করব। রাজনৈতিক বিষয়গুলো রাজনীতিবিদরা দেখবেন সরকার দেখবেন। আমাদের কাজের লিমিট দেওয়া আছে। এটা দল ও সরকারের ওপর নির্ভর করে। সরকারের সঙ্গে সভা করে দেওয়ার আয়োজন করা বা সংলাপ আয়োজন করা ইসির দায়িত্ব নয়।’