দলীয় কার্যালয়ে অভিযান, সংঘর্ষে দলীয় কর্মী নিহত ও সিনিয়র নেতাদের গ্রেফতার সত্ত্বেও আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশ করার সিদ্ধান্তে অনড় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল বুধবার (৭ ডিসেম্বর) রাতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক ডাকা হয়। সূত্র জানায়, ১০ ডিসেম্বর গণসমাবেশ নিয়ে আলোচনা করা হয়। যেকোনো মূল্যে ঢাকার গণসমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে সফল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
স্থায়ী কমিটির সদস্যরা মনে করেন, দমন-নিপীড়নের মুখে গণসমাবেশের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলে সারাদেশের নেতা-কর্মীদের মনোবল ভেঙে যাবে। এমনটা হলে আগামীর কর্মসূচি সফল করা যাবে না। তবে পুলিশ স্পষ্ট জানিয়েছে- নয়াপল্টনে কোনো অবস্থাতেই সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। সমাবেশ করার চেষ্টা করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিএনপি মনে করছে সমাবেশ বাধাগ্রস্ত করার জন্যই পরিকল্পিতভাবে এই সংঘর্ষ সৃষ্টি করা হয়েছে।
শত বাধা-বিপত্তি এলেও ঢাকার সমাবেশ হবে বলে একমত পোষণ করেছেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। এসময় নেতারা বলেন, এই সমাবেশ বিএনপির জন্য এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেকোনো মূল্যে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ সফল করার সিদ্ধান্ত হয়।
আগামী ১০ ডিসেম্বর গণসমাবেশের জন্য বিকল্প ভেন্যু না দিলে এখনও নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করা হবে বলে জানিয়েছে বিএনপি।
অপরদিকে সোহরাওয়ার্দী মাঠ এবং এর মতো খোলা জায়গা ব্যতীত রাস্তায় সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
গতকাল বুধবার নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, সরকার যদি পছন্দমতো বিকল্প ভেন্যু না দেয় তাহলে ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনেই সমাবেশ হবে। নো প্রশ্ন সমাবেশ করব, কিন্তু পুলিশ যেন দলীয় কোনো ভূমিকা পালন না করে।
দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সৈয়দ ইমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, যেকোনো মূল্যে আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকার গণসমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে সফল করা হবে।
বুধবার ৭ ডিসেম্বর সকাল থেকে নয়াপল্টনের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি নেতা-কর্মীরা জড়ো হতে থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতা-কর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকে। এ সময় পুলিশ তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। সেসময় পুলিশের সঙ্গে নেতা-কর্মীরা তর্কে জড়িয়ে পড়ে।
পুলিশ বিএনপি নেতাদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছোড়ে। পরে বিএনপি নেতা-কর্মীরাও লাঠিসোঁটা নিয়ে পুলিশকে ধাওয়া করে। দু’পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে নয়াপল্টন পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। পরে দলের কার্যালয়ের সামনের সড়কে নেতা-কর্মীরা দফায় দফায় মিছিল করেন। সড়কের টাওয়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানায়।
সংঘর্ষের সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় আশ্রয় নেয় নেতা-কর্মীরা। বিকেলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে থাকা বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বাইরে বের হন। এসময় একে একে কেন্দ্রীয় নেতাদের আটক করতে থাকে পুলিশ।
সন্ধ্যা সোয়া ৫টার দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকে পড়ে পুলিশ। ভেতরে ঢুকে মূল ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। দীর্ঘসময় ধরে কার্যালয়ের ভেতরে অভিযান চালিয়ে নেতা-কর্মীদের বের করে আনে তারা।
সংঘর্ষের সময় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আসেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কিন্তু তাকে কার্যালয়ে প্রবেশ করতে দেয়নি প্রশাসন। পরে তিনি গেটের সামনের সড়কে বসে পড়েন। দীর্ঘ দুই ঘণ্টা বসে থাকার পর নয়াপল্টন ত্যাগ করেন তিনি।