মেহেদী হাসান মিরাজ, সম্ভবত গত তিন-চারদিনে বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে আলোচিত নাম। আর এমনটা হবে না-ই বা কেন! ভারতের বিপক্ষে গত দুই ম্যাচে কী করেননি ডানহাতি এ অলরাউন্ডার। দলের বিপদের সময় ব্যাট হাতে খেলেছেন ম্যাচজয়ী সব ইনিংস। আবার বল হাতেও প্রয়োজনের সময় এনে দিয়েছেন উইকেট। আর ২৫ বছর বয়সী এ ক্রিকেটারের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ভারতকে স্তব্ধ করে দিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতল বাংলাদেশ।
মিরপুর শের-ই বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বুধবার সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ভারতকে ৫ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে ১০০ রানের অপরাজিত ইনিংস এবং বল হাতে গুরুত্বপূর্ণ ২ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ।
সিরিজ জয়ের ম্যাচটা হয়তো আরেকটু সহজ হতে পারত টাইগারদের জন্য। কিন্তু লড়াইটা জমিয়ে দিয়েছেন আঙুলের চোট নিয়েও ব্যাটে নামা ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ৯ নম্বরে ব্যাটিংয়ে যখন তিনি নামলেন তখন বাংলাদেশ ম্যাচজয়ের দ্বারপ্রান্তে। তবুও লড়াইটা শেষ বল পর্যন্ত নিয়ে গেলেন রোহিত। ২৮ বলে তার হার না মানা ৫১ রানে ২৬৬ রানে থেমেছে ভারত।
সিরিজ জয়ের মিশনে নেমে আজ ৭০ রান তোলার আগেই ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ঘোর বিপদে তখন ত্রাতা হয়ে আসেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এই দুজনের ব্যাটে চড়ে বিপর্যয় সামাল দিয়ে পরে দুর্দান্ত স্কোর গড়েছে টাইগাররা।
ভারতীয় বোলারদের কোণঠাসা করে রিয়াদ খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন আস্তে আস্তে। লাগসই জবাব দেন সমালোচকদের। সঙ্গে মিরাজও ছিলেন অনবদ্য। আগের ম্যাচে শেষ উইকেট জুটিতে মুস্তাফিজুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে জন্ম দিয়েছিলেন রূপকথার। ৫১ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে এনে দিয়েছিলেন ১ উইকেটের নাটকীয় জয়। এবার নিজেকে যেন ছাড়িয়ে গেলেন তিনি। চাপের মুখে অসাধারণ ব্যাটিং শৈলিতে তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি।
রিয়াদ তুলে নেন নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৭তম অর্ধ-শতক। মনে হচ্ছিল সেঞ্চুরি তুলে নেবেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। কিন্তু দলীয় ২১৭ রানের সময় ব্যক্তিগত ৭৭ রানে আউট হয়ে যান তিনি। উমরান মালিকের বলে ক্যাচ দেন উইকেট কিপার লোকেশ রাহুলের গ্লাভসে। তাতে ভাঙে রেকর্ড ১৪৮ রানের জুটি।
২০১৪ সালে ফতুল্লায় তৃতীয় উইকেটে এনামুল হক ও মুশফিকুর রহিমের ১৩৩ রান ছিল এত দিন ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটি। এবার সেটি ছাড়িয়ে গেল মাহমুদউল্লাহ-মিরাজের জুটি।
তবে রিয়াদ ফিরলেও মিরাজকে আটকায় কে? শেষ ওভারে যখন ব্যাট করছিলেন তখন অপরাজিত আছেন ৮৫ রানে। নাসুম ১ বল খেলায় বল ছিল আর ৫টি। সেঞ্চুরি করতে হলে ৫ বলে ১৫ রান তুলতে হতো। কী আশ্চর্য, দারুণ দক্ষতায় সেটিই করে দেখালেন মিরাজ। শের-ই বাংলার মাঠে তখন শেষ বিকেলের আলো, সেই আলোতে নিজেকে দারুণভাবে রাঙিয়ে নিলেন এই স্পিন অলরাউন্ডার। ৮৩ বলে করলেন ঝকঝকে এক সেঞ্চুরি।
শতরানেই অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন মিরাজ। অপর প্রান্তে নাসুম আহমেদও ছোটখাট একটা ক্যামিও খেলেছেন (১১ বলে ১৮)। বাংলাদেশ পেয়ে যায় ২৭১ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর।
২৭২ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ৬ বলে ৫ রান করে ফেরেন কোহলি। দ্বিতীয় ওভারে এবাদতের পেস বলে পুল করতে গিয়ে বোল্ড হন কোহলি। ৬ রানের ব্যবধানে শিখর ধাওয়ানকে ফেরান মুস্তাফিজুর রহমান। দলীয় ১৩ রানে প্রথম দুই উইকেট হারিয়ে শুরুতেই চাপে পড়ে ভারত।
ওয়াশিংটন সুন্দরকে নিয়ে শ্রেয়াস আয়ার চাপ সামলে নেওয়ার আগেই দশম ওভারে সাকিবের আক্রমণ। ওভারের শেষ বলে সাকিবের করা স্লোয়ার বলটা বুঝতেই পারলেন না ওয়াশিংটন সুন্দর। চেক ড্রাইভ খেলতে গিয়ে তুলে দেন মিডউইকেটে। সহজ ক্যাচ নিয়ে দলের তৃতীয় উইকেট নিশ্চিত করেন অধিনায়ক লিটন দাস।
লোকেশ রাহুলকে নিয়ে পরের উইকেটে জুটি গড়তে গিয়েও মিরাজের আঘাতে সফল হতে পারেননি আয়ার। তবে ভারতকে লড়াইয়ে ঠিকই ফিরিয়েছিলেন তিনি। পঞ্চম উইকেটে অক্ষর প্যাটেলকে নিয়ে ১০৭ রানের জুটি গড়ে ভারতীয়দের চালকের আসনে নিয়ে আসেন তিনি।
কিন্তু মিরাজের সামনে আবারও পরাস্ত ভারত। ৮২ রান করা আয়ারকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে আবার ম্যাচে ফেরান ডানহাতি এ স্পিনার। পরের দুই উইকেট পেতে বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি বাংলাদেশকে। ৫৬ বলে ৫৬ রান করা অক্ষর প্যাটেলকে বাউন্সারের ফাঁদে ফেলেন এবাদত। পরের উইকেটটা নিয়েছেন সাকিব আল হাসান। শার্দুল ঠাকুরকে স্ট্যাম্পিং করে ভারতের সপ্তম উইকেটটা তুলে নেন বাঁহাতি এ স্পিনার।
তবে শেষের দিকে ম্যাচ জমিয়ে তুলেন রোহিত শর্মা। আঙুলের চোটের কারণে ওপেনিংয়ে না নামা ভারতীয় অধিনায়ক বাংলাদেশের নাভিশ্বাস তুলেছেন শেষ দুই ওভারে। ঐ দুই ওভারে ভারতের দরকার ছিল ৪০ রান। কিন্তু শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করে ৫ রানে হারতে হয় ভারতকে।