আজ শনিবার (৩ ডিসেম্বর) রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিএনপির সর্বশেষ বিভাগীয় গণসমাবেশ। এর আগে ২০১৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে বিএনপির সর্বশেষ বিভাগীয় মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যদিও পথে পথে বাধার কারণে সেই মহাসমাবেশে রাজশাহী বিভাগের অধিকাংশ জেলা থেকে নেতাকর্মীরা অংশ নিতে পারেননি।
তবে এবারের চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। পরিবহন ধর্মঘট থাকায় তিন দিন আগ থেকেই রাজশাহীতে চলে এসেছেন অধিকাংশ নেতাকর্মী। আর যারা পারেননি তারা এখনও আসছেন। শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পর থেকে রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠের আশপাশের এলাকা মিছিল মুখর হয়ে উঠেছে। মুহূর্মুহূ বিক্ষোভ ও স্লোগানে যেন প্রকম্পিত হয়ে উঠছে ওই এলাকা। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সবাই যেন এখন গণসমাবেশমুখী।
এতে জনসাধারণের স্বাভাবিক চলাচল ব্যহত হচ্ছে। একে তো পরিবহন ধর্মঘট, কোনো গাড়ি নেই। এরপর যারা পায়ে হেঁটে চলাচল করছেন- মিছিল-মিটিংয়ের কারণে তাদেরকে মূল সড়ক ছেড়ে আশপাশের সড়ক নিজ নিজ গন্তেব্যে যেতে হচ্ছে। এতে অনেকেই বিড়ম্বনার মধ্যে পড়ছেন। বিশেষ করে শহরের সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে, মনিচত্বর, জাদুঘর মোড়, ফায়ার ব্রিগেড সড়ক এবং সিঅ্যান্ডবির মোড় সড়কে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করা যাচ্ছে না। সড়কে ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল করায় অনেক পয়েন্টে যানজট দেখা দিচ্ছে।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে রাজশাহী মহানগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেছে মহানগর পুলিশ। রাজশাহী শহরের প্রবেশমুখগুলোতে গত তিনদিন থেকেই অস্থায়ী চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহন তল্লাশি করা হচ্ছে। কাউকে সন্দেহ হলেই নাম-পরিচয় জিজ্ঞেস করছে পুলিশ। এছাড়া সমাবেশস্থলের আশপাশে পুলিশ মোতায়নসহ গোটা শহরজুড়ে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে।
আজ রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশকে ঘিরে রাজশাহী শহরে একরকম থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এরইমধ্যে মহানগরীর অলিগলিতে বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টারে সাটানো হয়েছে। খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে শহর জুড়ে চলেছে মাইকিং। দিনভরই বিভিন্ন জেলা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে গণসমাবেশ স্থলে যাচ্ছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। সবকিছু মিলিয়ে বড় ধরনের কোনো প্রশাসনিক বাধা না থাকায় এমন চিত্র মানুষের চোখে পড়েছে বহু বছর পর।
সন্ধ্যার পর মহানগরীর ফায়ার সার্ভিস মোড়ে গিয়ে দেখা যায় ব্যাপক জনাকীর্ণতা। কিছুক্ষণ পর পরই বিভিন্ন নেতার অনুসারীরা খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন স্লোগানে মুখরিত করে তুলছে। তবে একটি দলকে ‘নারায়ে তাকবির’ স্লোগান দিতে দেখা যায়। যদিও ওই স্লোগানরত কর্মীদের কাছে যেয়ে দেখা যায় তারা জামায়াত ইসলামী নয়। ওইটি ওলামা দলের মিছিল ছিল। এর আগে আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার পর রাজশাহী মহানগর ছাত্রদল সবাবেশস্থল থেকে একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের দিকে আসলে শহরে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। তবে মিছিলটি শহরের মনিচত্বর থেকে মাদ্রাসা মাঠের গণসমাবেশের দিকে চলে গেলে শহরের অবস্থা স্বাভাবিক হয়।
তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রাজশাহী শহরের প্রবেশমুখগুলোতে চেকপোস্ট বসানো ছাড়াও সাদা পোশাকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ কাজ করছে। বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে নেওয়া হয়েছে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নে রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) রফিকুল আলম জানান, গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে কেউ যাতে নাশকতা বা সহিংসতা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য তারা সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছেন। সমাবেশকে কেন্দ্র করে তিনস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সিসিটিভির মাধ্যমে গোটা শহরে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহলও। সাদা পোশাকে পুলিশ কাজ করছে। এছাড়া গোয়েন্দা নজরদারিও রয়েছে। কেউ কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে তাকে কঠোর হাতে দমন করা হবে বলো জানান রাজশাহী মহানগর পুলিশের এই মুখপাত্র।