নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও বাড়ছে না প্রবাসী আয়। ঘুরে ফিরে সেই পুরনো বৃত্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে। চলতি মাসের ২৫ দিনে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ১৩৪ কোটি ৭১ লাখ মার্কিন ডলার। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১০৬ টাকা ৫০ পয়সা ধরে) যার পরিমাণ ১৪ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হাল নাগাদ পরিসংখ্যানে এমন চিত্রই উঠে এসেছে।
এ ধারা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৬০ কোটি ডলারে। যা আগের মাসের চেয়ে কিছুটা বেশি এবং গত বছরের নভেম্বের মাসের চেয়েও বেশি। তবে চলতি বছরের শুরু এবং গত বছরের শেষের মাসগুলোর চেয়ে কম। ফলে আপাতত প্রবাসী আয়ে বড় ধরণের ধস না নামলেও বড় ধরণের কোনো বৃদ্ধিও দেখা যাচ্ছে না।
অর্থনীতির অন্যতম এ সূচকটির নেতিবাচক গতি দুশ্চিন্তায় ফেলেছে সরকারকে। এমন পরিস্থিতিতে বৈধ পথে রেমিট্যান্স আনতে বিভিন্ন শর্ত শিথিল, চার্জ ফি মওকুফসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারপরও প্রবাসী আয়ে মিলছে না আশানুরূপ সাফল্য। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে প্রবাসী আয়ে তার ছাপ পড়েছে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেশে ব্যাংক নিয়ে নানা রকম অপপ্রচার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বরের ২৫ দিনে যে পরিমাণ প্রবাসী আয় এসেছে, এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ২৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ২ কোটি ৮৮ লাখ মার্কিন ডলার, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১০৭ কোটি ৯৮ লাখ ডলার এবং দেশে ব্যবসারত বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৪৪ লাখ মার্কিন ডলার।
এই ২৫ দিনে যথারীতি সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। সর্বোচ্চ ৩২ কোটি ৮৮ লাখ ডলার এসেছে ব্যাংকটির মাধ্যমে। এরপর অগ্রণী ব্যাংকে এসেছে ৯ কোটি ৬ লাখ, ডাচ্–বাংলা ব্যাংকে ৮ কোটি ৫৫ লাখ, সোনালী ব্যাংক ৮ কোটি ১৪ লাখ এবং আল আরাফা ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৬ কোটি ৪৫ লাখ ডলার প্রবাসী আয়।
প্রবাসী আয় প্রবাহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৪৯ কোটি ৪৪ লাখ মার্কিন ডলার। এরপর প্রবাসী আয় ওঠানামা করলেও গত অক্টোবরের মতো প্রবাসী আয় প্রবাহ এতোটা কমেনি। অক্টোবরে ১৫২ কোটি ৫৪ লাখ মার্কিন ডলার প্রবাসী আয় এসেছে। যা ছিল টানা ৮ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। ২০২১ সালের অক্টোবরে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৬৪ কোটি ৬৯ লাখ ডলার।
হুন্ডির মাধ্যমে প্রবাসী আয় পাঠানোর কারণেই বৈধপথে প্রবাসী আয় কমছে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। বৈধ উপায়ে পাঠাতে প্রবাসী আয়ের বিপরীতে আড়াই শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেওয়া, প্রবাসী আয় পাঠানো ব্যক্তিদের সিআইপি সম্মাননা দেওয়া, রেমিট্যান্স বিতরণ প্রক্রিয়া সম্প্রসারণ ও সহজ করা, অনিবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বিনিয়োগ ও গৃহায়ণ-অর্থায়ন সুবিধাও দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া ফিনটেক পদ্ধতির আওতায় আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার অপারেটরকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ড্রয়িং ব্যবস্থা স্থাপনে উদ্বুদ্ধ করা ও প্রবাসী আয় পাঠাতে ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর চার্জ ফি মওকুফ করা হয়েছে। তারপরও প্রবাসী আয়ে গতি ফিরছে না।