আফগানিস্তানে ক্ষমতাসীন তালেবান গোষ্ঠী দেশটির নারী ও অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের ওপর যেসব বিধিনিষেধ জারি করেছে, সেসব মানবতাবরোধী অপরাধের সমতুল্য বলে মনে করে জাতিসংঘ।
শুক্রবার জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত রিচার্ড বেনেট এবং বৈশ্বিক এই সংস্থাটির অন্যান্য মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা আফগানিস্তানে নারীদের পরিস্থিতি সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন জমা দেন। সেখানে বলা হয়েছে, ‘তালেবানগোষ্ঠী আফগানিস্তানের নারী ও মেয়েশিশুদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে এবং বিভিন্ন কঠোর আইন জারির মাধ্যমে ধীরে ধীরে যেভাবে তাদের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা তারা কেড়ে নিচ্ছে, তা ব্যাপকভাবে নিপীড়নমূলক। আফগান নারী ও মেয়েরা মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকার হচ্ছেন।’
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে তালেবানগোষ্ঠী কাবুল দখল করার পর থেকে এ পর্যন্ত অফগানিস্তানের সরকারি চাকরিজীবী নারীদের অধিকাংশই তাদের চাকরি হারিয়েছেন। যারা এখনও চাকরিতে আছেন, তাদের সবারই বেতন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে; কিন্তু পুরুষ চাকরিজীবীদের বেতন কমানো হয়নি।
নারীদের বিদেশভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তালেবান; আর দেশের ভেতর ভ্রমণের বেলায় সঙ্গে স্বামী-ছেলে বা পুরুষ কোনো আত্মীয়ের সঙ্গে বের হওয়া বাধ্যতামূলক করেছে। সেই সঙ্গে বাড়ির বাইরে বের হতে হলে নারীদের বোরকা পরতে হবে বলেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সাম্প্রতিক এক নির্দেশনায় পার্ক, বিনোদনমেলা, ব্যায়ামাগার এমনকি বাড়ির বাইরে গণস্নানাগারে যাওয়ার ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তালেবান।
২০২১ সালে তালেবানগোষ্ঠী ক্ষমতা দখলের পর প্রথমেই কো-এডুকেশন নিষিদ্ধ করে, সেই সঙ্গে বন্ধ করে দেয়ে মেয়েদের যাবতীয় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো। এখনও সেসব বন্ধ রয়েছে।
জাতিসংঘের প্রতিবদনে বলা হয়, ‘তালেবান গোষ্ঠী ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে নারীদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকারের ওপর কঠোর হওয়া শুরু করে, যা আধুনিক বিশ্বে অগ্রহণযোগ্য। বর্তমানে তাদের এই কঠোরতা আরও বেড়েছে এবং নারীদেরকে জোর করে ঘরে বন্দি রাখার যে কৌশল তারা নিয়েছে, তাতে আফগান নারীদের পারিবারিক নির্যতনের শিকার হওয়ার ঝুঁকি ও মানসিক সুস্থ্যতা— উভয়েই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।’
কয়েকদিন আগে ‘চুরি ও আদর্শহীনতা জনিত অপরাধে’ আফগানিস্তানের লোঘার প্রদেশের একটি ফুটবল মাঠে ৩জন নারী ও ১১ জন পুরুষকে চাবুকপেটা করা হয়েছে। লোঘার প্রদেশের এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তালেবানগোষ্ঠীর শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশেই এই ‘শাস্তি’ দেওয়া হয়েছে অপরাধীদের।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে এ সম্পর্কে আতঙ্ক প্রকাশ করে বলা হয়,‘আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, এ ধরনের শাস্তি মানবাধিকারের সুস্পষ্ট ও চরমমাত্রার লঙ্ঘণ।’