দেশের বিভিন্ন স্থানে বাধার পাহাড় ঠেলে বিপুল মানুষের উপস্থিতিতে সমাবেশ করেছে বিএনপি। আজ শনিবার কুমিল্লা টাউন হল মাঠে দলটির অষ্টম গণসমাবেশ। তবে অন্যান্য সমাবেশের থেকে এটি অনেকটাই ব্যতিক্রম। এবার ডাকা হয়নি কোনো পরিবহন ধর্মঘট, দেওয়া হয়নি কোনো বাধা। ফলে এ সমাবেশ ঘিরে দলীয় নেতাকর্মীর মধ্যে দেখা দিয়েছে উৎসবের আমেজ ও উচ্ছ্বাস। এরই মধ্যে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে সমাবেশস্থল টাউন হল মাঠ। মিছিল-স্লোগান ও মাইকিংয়ে মুখর নগরী। গত বৃহস্পতিবার বিচ্ছিন্নভাবে নেতাকর্মী সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করলেও শুক্রবার সকাল থেকেই স্রোত নামে। এ মাঠেই দুপুরে পৃথক দুটি জামাতে দলীয় নেতাকর্মীরা জুমার নামাজ আদায় করেন। অনেকেই খাবার খেয়েছেন সমাবেশস্থলে। চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়াও কুমিল্লার সবক’টি উপজেলা থেকেই নেতাকর্মী সমাবেশস্থল ও নগরীর বিভিন্ন স্থানে সমবেত হন।
দলীয় সূত্র বলছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনাসহ বেশকিছু দাবিতে সিরিজ সমাবেশ করছে বিএনপি। আজকের সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গতকাল সরেজমিনে মাঠে গিয়ে দেখা যায়, নেতাকর্মী নিজ নিজ এলাকার পক্ষে স্থান দখলের চেষ্টা করছেন। দুপুর থেকে সমাবেশস্থলে খণ্ড খণ্ড মিছিল আসতে থাকে। তবে বিকেল সাড়ে ৪টার মধ্যেই মাঠ পূর্ণ হয়ে যায়। সমাবেশস্থল ও আশপাশের এলাকা লোকে-লোকারণ্য হয়ে পড়ে। বিকেল ৫টার দিকে হলুদ গেঞ্জি ও কমলা রঙের টুপি পরে লাকসাম বিএনপির দুই শতাধিক নেতাকর্মী টাউন হল মাঠে প্রবেশ করতে গিয়ে দেখেন, মাঠে জায়গা নেই। আবদুল লতিফ নামে এক বিএনপি কর্মী বলেন, এত আগে এসেও দেখি এখন মাঠে স্থান নেই। দাউদকান্দির গোয়ালমারি ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মনির হোসেন মুন্সী বলেন, দুপুরে সমাবেশস্থলে এলে হয়তো বসার জায়গাটুকুও পেতাম না। সমাবেশ শেষ না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকব, রাতে খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন নেতারা।
নেতাকর্মীর নিয়ে সেখানে আসা কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এ এফ এম তারেক মুন্সী বলেন, আমরা উত্তর জেলার নেতাকর্মীরা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। এরই মধ্যে নগরীতে আমাদের উত্তর জেলার অন্তত ৩০ হাজার নেতাকর্মী চলে এসেছেন, সকালে আরও আসবেন। নগরীতে তাঁদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু বলেন, টাউন হল মাঠে নেতাকর্মীরা গাদাগাদি করে দাঁড়ালে বড় জোর ৩০ হাজারের স্থান হবে। কিন্তু নেতাকর্মীর যে স্র্রোত দেখছি, তাতে এত নেতাকর্মীর স্থান ম্যানেজ করতে গিয়ে নগরীর সব সড়কে সকাল থেকে তাঁদের অবস্থান করতে হবে। এ ছাড়া উপায় দেখছি না। বিভাগীয় সমাবেশ ব্যবস্থাপনা কমিটি ও দলের দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক হাজী আমিন রশিদ ইয়াছিন বলেছেন, সমাবেশের সব প্রস্তুতি শেষ। এখন দলে দলে নেতাকর্মীরা সম্মেলনস্থলে সমবেত হচ্ছেন। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া বলেন, সকাল ১১টা থেকে মহানগর, জেলা ও উপজেলার নেতৃবৃন্দ বক্তব্য শুরু করবেন। দুপুরের পর থেকে পর্যায়ক্রমে দলের কেন্দ্রীয় ও সিনিয়র নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন। পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান সমকালকে বলেন, যেহেতু এ সমাবেশে অনেক লোকের সমাগম ঘটবে, তাই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সব বিষয়ে পর্যাপ্ত পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা কাজ করছেন। চলাচলের সুবিধার্থে নগরীর বাইরে থেকে আসা সব ধরনের যানবাহন নগরীতে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
বহিস্কৃত মেয়র প্রার্থী সাক্কু-নিজাম সমাবেশে থাকছেন: দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কুমিল্লা সিটির নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হওয়া সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু ও নিজাম উদ্দিন কায়সারের বহিস্কার প্রত্যাহারের জোর গুঞ্জন থাকলেও শেষ পর্যন্ত দলের হাইকমান্ড থেকে এমন সবুজ সংকেত আসেনি বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে ওই দুই মেয়র প্রার্থী সমকালকে বলেছেন, তাঁরা আজকের সমাবেশস্থলে থাকবেন।