গাজীপুর মহানগরীর পূবাইল মেট্রোপলিটন থানার খিলগাঁও এলাকায় সুদের টাকার জন্য বাবাকে বাড়িতে না পেয়ে দিনমজুর ছেলে রিদয় (১৮)কে অপহরণ করে পাওনা টাকার আদায়ের নামে ৫ হাজার টাকার চুক্তিতে দিনভর নৃশংসভাবে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। অপহরণের ঘটনাটি ঘটেছে রোববার সকাল ৮ টার দিকে। তখন খাদিজা বেগম পোশাক কারখানায় কাজে ছিলেন। আর সোমবার এ বিষয়ে পূবাইল থানায় রিদয়ের মা খাদিজা বেগম বাদী হয়ে ৪ জনকে আসামি করে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযুক্তরা হলেন একই এলাকার কতিথ মুদির দোকানী ও খেলাপাড়ার জুয়ার আড্ডার প্রধান টাকা লগ্নিকারী আলম সরদার (৪৫), মোশারফের ছেলে রাব্বি (২২), নজরুল ইসলামের ছেলে শাহিন ও আফাজ উদ্দিনের ছেলে বকুল। বাদী খাদিজা বেগম একই এলাকার স্থানীয় রহিমা বেগমের ভাড়াটিয়া। অভিযোগকারী যুগান্তরকে জানিয়েছেন চিকিৎসার ব্যয়ের নামে মারধরের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে মাত্র ১০ হাজার টাকা।
পূবাইল থানার ওসি জাহিদুল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, অভিযোগ ভালো করে পড়ে ব্যবস্থা নিবেন তিনি। ভিকটিম রিদয়কে স্থানীয় কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকালে গাজীপুর মহানগরীর তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জানা যায়, ভিকটিমের বাবা আশরাফ হোসেনকে ৯ মাস পূর্বে প্রধান আসামি মুদি দোকানদার আলম সরদার ছুরি নিয়ে মারার উদ্দেশ্যে দৌঁড়ানি দিলে ভয়ে তিনি এলাকা ছেড়ে পালিয়া যান। ফলে মা খাদিজা স্থানীয় একটি পোশাক কারখানার চাকরি করে ও ছেলে রিদয়ের দিন মজুরের উপার্জনের টাকায় কোনভাবে খেয়ে না খেয়ে সংসার চলছিল। রোববার সকাল ৮টায় স্থানীয় আরিফ হোসেনের বোরে খেতে দিন মজুরের কাজ থেকে ডেকে নিয়ে নির্জন স্থানে হাত-পা বেঁধে দিনভর অমানুষিক নির্যাতনসহ মারধর করে অভিযুক্তরা।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রোববার সকাল ৮টার দিকে ভাড়াটিয়া মাস্তান ও সন্ত্রাসী রাব্বি, শাহিন ও বকুল আরিফের ধান খেত থেকে ডেকে মোটর সাইকেলে তুলে নিয়ে যায়। নির্জন জঙ্গলে নিয়ে হাত পা বেঁধে সারাদিন নির্যাতন করে আলমের নির্দেশনায়। দিনভর পেটানোর পারিশ্রমিক চুক্তি মোতাবেক পান ৫ হাজার টাকা। রিদয়কে অমানষিক নির্যাতনের সময় সারাদিন কোন খাবার দেয়নি। নৃশংস নির্যাতনে অজ্ঞান হয়ে গেলে চোখে মাথায় পানি দিয়ে জ্ঞ্যান ফিরান সন্ত্রাসীরা। তৃষ্ণায় ছটফট করে কাতরালেও মিলেনি একফোঁটা পানি। প্রাণভিক্ষা চেয়েও তাদের মন গলাতে পারেনি রিদয়। পানি চাইলে দেয়া হয় মূত্র। এমনকি দাড়িয়ে তিনজনই রিদয়েয় মুখে করে দেন প্রশ্রাব। অবশেষে মৃতপ্রায় মুমূর্ষু অবস্থায় রিদয়কে রাত ৯টায় স্থানীয় খিলগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠের পাশে ফেলে রেখে যায় অভিযুক্তরা।
বিষয়টি থানা পুলিশকে জানালে চিরতরে শেষ করে দিবে বলে হুমকি দিয়ে চলে যায় অপহরণকারীরা। ঘটনা ধামাচাপা দিতে একটি মহল আপোষের নামে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে ভিকটিমের মা পোশাক কর্মী খাদিজাকে। পূবাইল থানায় ৪ জনকে আসামি করে একটি অভিযোগ দেয়ার ৩ দিন পেরোলেও মামলা রেকর্ড হয়নি।
তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সাইফুল ইসলাম বলেন, বাদী আপোষ হতে চায় তাই মামলা রেকর্ড করা যাচ্ছেনা। বাদি চাইলে মামলা হবে। বাদী খাদিজা বলছেন আমি মামলা করতে চাই কিন্তু মামলা নিচ্ছে না পুলিশ। অন্যদিকে দিনমজুর ছেলে রিদয় মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালের ফ্লোরে যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন। রিদয়ের মা খাদিজা বলছেন আমার ছেলের মতো কারো ছেলের যেন এমন অবস্থা না হয়। অমানবিক নিষ্ঠুর নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচার চাই আমি।