প্রাথমিক পর্যায়ের এক কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেয় সরকার। এতদিন রূপালী ব্যাংকের শিওর ক্যাশের মাধ্যমে উপবৃত্তির টাকা বিতরণ করা হতো। গত বছর নতুন করে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’র মাধ্যমে অর্থ বিতরণের চুক্তি করে সরকার।
এরপর নগদের সার্ভারের শিক্ষার্থীর জন্মনিবন্ধন, পিতা/মাতার এনআইডি, সঠিক মোবাইল নম্বর দিয়ে নতুন করে তথ্য এন্ট্রি দিতে দিতে হয় শিক্ষার্থীদের। কিন্তু জন্মনিবন্ধন না থাকা, পিতা-মাতার মোবাইল নম্বরে সমস্যা, শিক্ষার্থীদের খুঁজে না পাওয়াসহ আরও কিছু কারণে ৬ লাখ ২৫৬ জন শিক্ষার্থী সার্ভারে প্রয়োজনীয় তথ্য আপলোড করতে পারেনি।
ফলে সর্বশেষ কিস্তি (২০২০ সালে এপ্রিল-মে) উপবৃত্তি তারা পায়নি। সামনে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসের উপবৃত্তির সঙ্গে জামা ও জুতা কেনার জন্য এককালীন আরও ১ হাজার টাকা কিউট অ্যালাউন্স দেওয়া হবে। বঞ্চিত এসব শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তির এ সুবিধার আওতায় আনতে তোড়জোড় চালাচ্ছে উপবৃত্তি প্রকল্প।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ এক কোটি ১২ লাখ ৭৪ হাজার ৭৯০ জনের তথ্য সার্ভারে আপলোড হয়েছে। বাকি শিক্ষার্থীদের ডাটা এন্ট্রির আওতায় আনতে দুই দফা সময় দেওয়া হয়। সর্বশেষ আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত আরেক দফা সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রদান প্রকল্পের পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. ইউসুফ আলী বলেন, ‘গত বছরের দ্বিতীয় কিস্তির বকেয়া টাকা গত ফেব্রুয়ারিতে বিতরণ শেষ হয়েছে। যাদের তথ্যে ত্রুটি আছে তাদের এ কিস্তির টাকা দেওয়া হয়নি। তবে তথ্য আপডেট করলে পরবর্তীতে কিস্তির টাকা পাবে।’
তিনি আরও বলেন, সার্ভারে শতভাগ তথ্য আপলোড করা না হলে কাউকে উপবৃত্তির টাকা দেওয়ার সুযোগ নেই। এখনও যারা তথ্য আপলোড করতে পারেনি তাদের আরেক দফা সুযোগ দেওয়া হবে। কতজন শিক্ষার্থী এখনও ডাটা এন্ট্রির বাইরে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুই দফা তথ্য আপলোড করার পর এখন কতজন বাকি তা জানা নেই।
প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসের উপবৃত্তির অর্থ এবং জুতা ও জামা কেনার জন্য এককালীন ১ হাজার টাকা কীট অ্যালাউন্স দেওয়া হবে। সেজন্য সর্বশেষ নগদের সার্ভার ‘pespmynagad’ পোর্টাল উন্মুক্ত করা হবে। সে লক্ষ্যে ২০২১ সালের যে শিক্ষার্থীদের যাবতীয় তথ্য (জন্মনিবন্ধন, পিতা/মাতার এনআইডি, সঠিক মোবাইল নম্বর ইত্যাদি) হালনাগাদ নেই, তাদের জরুরি ভিত্তিতে আগামী ১৫ এপ্রিলের মধ্যে তথ্য প্রমাণ দিয়ে হালনাগাদ করতে হবে।
বুধবার (৭ এপ্রিল) ‘প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রদান প্রকল্প (৩য় পর্যায়)’ থেকে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা সারাদেশে আঞ্চলিক কার্যালয়, জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাদ পড়া শিক্ষার্থী অভিভাবকদের কাছে জরুরি ভিত্তিতে এ বার্তাটি পৌঁছাতে হবে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ৩য় ও ৪র্থ কিস্তির উপবৃত্তির অর্থ ও কিট অ্যালাউন্স সুবিধাভোগীর মোবাইল অ্যাকাউন্টে প্রেরণের নিমিত্তে সুবিধাভোগী নির্বাচনসহ ডিমান্ড সংক্রান্ত ডাটা এন্ট্রির যাবতীয় তথ্যাদি পোর্টালে এন্ট্রির জন্য আগামী ১৫ এপ্রিলের মধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য হালনাগাদ করে পূর্বপ্রস্তুতি সম্পন্ন করার অনুরোধ করা হলো।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নগদের সঙ্গে প্রাথমিকের উপবৃত্তির অর্থ বিতরণের চুক্তির পর বেশকিছু নতুন শর্ত আরোপ করা হয়। এর মধ্যে শিক্ষার্থীর জন্মনিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক। কিন্তু করোনার মধ্যে জন্মনিবন্ধনের কেন্দ্রীয় সার্ভারে সমস্যা থাকায় অভিভাবকরা সনদ সংগ্রহ করতে পারেননি। ফলে উপবৃত্তির টাকা পাননি তাদের সন্তানরা। এ কারণে মুজিববর্ষ উপলক্ষে জামা-জুতা কেনার এককালীন এক হাজার টাকা পাওয়া নিয়েও অনিশ্চিয়তা তৈরি হয়েছে।
সর্বশেষ এক কোটি ১২ লাখ ৭৪ হাজার ৭৯০ জনের তথ্য সার্ভারে আপলোড হয়েছে। সার্ভারে আপলোড হওয়া তথ্যের সঙ্গে জন্মনিবন্ধন সনদ না থাকা এবং অন্যান্য ত্রুটি থাকায় ৬ লাখ ২৫৬ শিক্ষার্থী উপবৃত্তির বাইরে রয়েছে। এরপর আরও দুই দফা ডাটা এন্ট্রি করার সুযোগ দেওয়া হয়।
এর মধ্যে জন্মনিবন্ধনসহ সঠিক তথ্য রয়েছে এক কোটি আট লাখ ১৪ হাজার ৫৩৪ জনের। সঠিক তথ্য থাকা শিক্ষার্থীদের গত বছরের এপ্রিল থেকে জুনের বকেয়া উপবৃত্তির টাকা গত ফেব্রুয়ারি মাসে বিতরণ শেষ হয়েছে। কিন্তু সার্ভারে আপলোড হওয়া তথ্যের সঙ্গে জন্মনিবন্ধন সনদ না থাকা এবং অন্যান্য ত্রুটি থাকায় ছয় লাখ ২৫৬ শিক্ষার্থী এ কিস্তির উপবৃত্তির টাকা পায়নি।