ফেনীর পরশুরামের বাঁশপদুয়া সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় বিএসএফ সদস্যরা মেজবাহার (৪৭) নামের এক কৃষককে ধরে নেওয়ার ৩ দিন পর বুধবার (১৬ নভেম্বর) তার লাশ দেখতে পায় স্থানীয় গ্রামবাসী। নিহত মেজবাহ উদ্দিন পৌর এলাকার উত্তর গুথুমা গ্রামের মফিজুল ইসলামের ছেলে। সে পেশায় একজন কৃষক। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের মধ্যবর্তী এলাকা নোম্যান্সল্যান্ড এলাকায় থাকার কারণে রাত ৯টা পর্যন্ত লাশ উদ্ধার করতে পারেনি বিজিবি। বিজিবি ভারতীয় বিএসএফকে বৈঠকের জন্য বারবার তাগাদা দিলেও তারা কোনো সাড়া না দেওয়ায় লাশ উদ্ধার সম্ভব হয়নি।
বুধবার (১৬ নভেম্বর) সকাল ১১টার দিকে গ্রামবাসী উপজেলার বাঁশপদুয়া সীমান্ত এলাকায় ভারতের কাঁটাতারের ৬৪নং পিলারের ৯-১০নং পিলারের একশ গজ ভেতরে স্থানীয়রা মেজবাহারের লাশ জঙ্গলে পড়ে থাকতে দেখে বিজিবিকে খবর দেয়। স্থানীয় এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্র জানায়, ১৩ নভেম্বর (রোববার) বিকেলে উপজেলার বাঁশপদুয়া গ্রামের সীমান্তবর্তী এলাকায় বাংলাদেশের অংশে ধান কাটাছিলেন মেজবাহার। এ সময় ভারতীয় বিএসএফ ওই সীমান্ত এলাকায় চোরাকারবারিদের ধাওয়া করতে গিয়ে বাংলাদেশ অংশে প্রবেশ করে এবং মেজবাহার উদ্দিনকে পেয়ে আটক করে নিয়ে যায়। মেজবাহ উদ্দিনের স্ত্রী মরিয়ম ও তার পরিবার বিষয়টি ওই দিন স্থানীয় বিজিজি ও পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করে।
স্থানীয় কাউন্সিলর ও গ্রামবাসী জানান, পরদিন সোমবার সকাল ১১টা, দুপুর ২টা এবং বিকেল সাড়ে ৫টায় পর পর তিনবার বিজিবি ও ভারতীয় বিএসএফের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক পতাকা বৈঠক করেন। কিন্তু মেজবাহার উদ্দিনকে ধরে নেওয়ার বিষয়টি ভারতীয় বিএসএফ অস্বীকার করেন।
নিহত মেজবাহারের স্ত্রী মরিয়ম আক্তার ও স্থানীয় গ্রামবাসী বলেন, ১৩ নভেম্বর বিকেলে ভারতীয় বিএসএফ বাংলাদেশে প্রবেশ করে মেজবাহারকে ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে তার লাশ কাঁটাতারের একশ গজ ভেতরে জঙ্গলের ভেতরে ফেলে দেয়। এ ঘটনায় তারা তদন্ত পূর্বক শাস্তির দাবি জানান।
পরশুরাম পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সুমন জানান, রোববার বিকেলে মেজবাহারকে ভারতীয় বিএসএফ ধরে নিয়ে যায়। কিন্তু সীমান্ত এলাকায় দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ভারতীয় বিএসএফ তাকে ফেরত না দিয়ে অস্বীকার করেন। বুধবার সকালে তার লাশ দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা লাশ সনাক্ত করেন। ভারতের বিএসএফের অসহযোগিতার কারণে রাত ৯টা পর্যন্ত লাশ উদ্ধার করা যায়নি।
পরশুরাম মডেল থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, তিনদিন পূর্বে ভারতীয় বিএসএফ একজনকে ধরে নিয়ে গেছে বলে শুনেছি। বুধবার দুপুরে একটি লাশ জঙ্গলে পড়ে থাকতে দেখে গ্রামবাসী পুলিশকে খবর দেয়। যেহেতু ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকা তাই বিজিবি আইনী পক্রিয়ার মাধ্যমে লাশ উদ্ধার করবে। বুধবার রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ফেনী ৪ বিজিবি ফেনী ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্নেল আরিফুর রহমান বলেন, ভারতের কাঁটাতারের একশ গজের ভিতরে এক তরুণের লাশ দেখতে পেয়ে স্থানীয় লোকজন বিজিবিকে খবর দেয়। তবে ওই লাশের পরিচয় এখনো জানা যায়নি। স্থানীয়রা দাবি করছেন তিনদিন পূর্বে বাংলাদেশি একজনকে ভারতীয় বিএসএফ ধরে নিয়ে হত্যা করে ওই জঙ্গলে ফেলে দিয়েছে। তবে ওই ব্যক্তির পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।