সাধারণত একজন নবজাতক ৪০ সপ্তাহ বা ২৮০ দিন মায়ের গর্ভে থাকার পর জন্মগ্রহণ করে। এসময় পর্যন্ত শিশু মায়ের পেটে থাকার পর পৃথিবীতে এসে বেঁচে থাকার মতো পরিপক্বতা ও শক্তি অর্জন করে। কিন্তু মায়ের বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় কখনো কখনো সময়ের আগেই শিশুর জন্ম হয়ে যায়। ৩৭ সপ্তাহ বা ২৫৯ দিন পূর্ণ হওয়ার আগেই জন্ম নেওয়া এসব শিশুকে বলা হয় প্রিম্যাচিউর (অপরিপক্ব) নবজাতক।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলেন, নিউমোনিয়ার পর বিশ্বে নবজাতক-মৃত্যুর বড় একটি কারণ এই প্রিম্যাচিউর বার্থ অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শিশুর জন্ম। প্রায় ৪৫ শতাংশ নবজাতকের মৃত্যু ঘটে সময়ের আগে জন্ম নেওয়ার কারণে। সারা বিশ্বে প্রতি বছর ১ কোটি ৫০ লাখ নবজাতক ৩৭ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার আগেই জন্মগ্রহণ করে। অর্থাৎ প্রতি ১০টি শিশুর মধ্যে একটি প্রিম্যাচিউর শিশু জন্মায়। তাদের মধ্যে অনেকেই থাকে স্বল্প ওজনের বা ২ হাজার ৫০০ গ্রামের কম। এসব শিশুর বেঁচে থাকাই বড় চ্যালেঞ্জ। ফলে এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।
বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক হেলথ সার্ভে ২০১৭-২০১৮-এর তথ্যমতে, জন্মের দুই থেকে সাত দিন এবং ৮ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে ১৮ শতাংশ নবজাতকের মৃত্যু হয়। প্রতি বছর ৯০ হাজার নবজাতকের মৃত্যু হয়। ঘণ্টায় মারা যায় ১০ থেকে ১১ জন নবজাতক। নবজাতক মৃত্যুর কারণগুলোর মধ্যে ১৯ শতাংশ প্রিম্যাচিউর অ্যান্ড লো বার্থ ওয়েট, ১৩ শতাংশ নিউমোনিয়া, ২৩ শতাংশ জন্মের সময় শ্বাসকষ্ট। এছাড়াও বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বের মতো আজ ১৭ নভেম্বর দেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব প্রিম্যাচুরিটি দিবস-২০২২। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য হয়েছে—‘প্যারেন্টস এমব্রেস : এ পাওয়ারফুল থেরাপি’ অর্থাৎ পিতামাতার আলিঙ্গন : একটি শক্তিশালী থেরাপি।’
সময়ের আগে নবজাতক জন্ম নেওয়ার কারণ সম্পর্কে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. ইফফাত আরা শামসাদ ইত্তেফাককে বলেন, গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মা যেসব জটিলতার ভেতর দিয়ে যান, তার ওপর কিছুটা নির্ভর করে প্রিম্যাচিউর নবজাতক জন্ম। আরো কারণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মায়ের গর্ভকালীন সময়ে অপ্রতুল পরিচর্যা।
গাইনোকলোজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. গুলশান আরা ইত্তেফাককে বলেন, গর্ভবর্তী মায়ের মাল্টিপুল প্রেগনেন্সি অর্থাৎ পেটে একাধিক সন্তান থাকলে, অ্যামনিওটিক মেমব্রেন তথা যোনিপথে বা মূত্রনালিতে সংক্রমণ হলে প্রিম্যাচিউর নবজাতকের জন্ম হতে পারে।