দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গণমাধ্যমের সহযোগিতা চেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এজন্য সরকারের গঠনমূলক সমালোচনার পাশাপাশি উন্নয়ন, অর্জনও গণমাধ্যমে গুরুত্ব দিয়ে প্রচারেরও অনুরোধ জানানো হয়। বুধবার (১৬ নভেম্বর) রাতে ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এইচ চৌধুরী হলে দেশের বিভিন্ন সংবাদপত্র, অনলাইন ও টেলিভিশনের সম্পাদকসহ জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ অনুরোধ জানান।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পদাক ড. হাছান মাহমুদ এ অনুষ্ঠানে সবাইকে আমন্ত্রণ জানান। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদাক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। গণমাধ্যমের সম্পাদকদের উদ্দেশ্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা আপনাদের কাছে আমাদের ডিউটা চাই। আমরা চাই পূর্ণিমার আলোয় যেটা ঝলমল সেটাকে আলো হিসেবে দেখুন। অমাবস্যার অন্ধকারকে আপনি যদি আলো ভাবেন সেটাতো আলো নয়। আমরা এ কথাটাই বলছি। ডিউ কাভারেজ চাই। আমরা বেশি চাই না। আমরা এটা বলি না বিরোধী দলের কাভারেজ দেবেন না। আমরা শক্তিশালী বিরোধী দল চাই। কারণ গণতন্ত্র তো এক চাকার সাইকেল না।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আজকে বিশ্ব সংকটে বাংলাদেশের যে বাস্তবতা, এ বাস্তবতা তিনি মেনে চলছেন। আমাদের আগে মানুষকে বাঁচাতে হবে। মানুষ কষ্টে আছে। গরিব মানুষ, স্বল্প বিত্ত, স্বল্প আয়ের মানুষ সত্যি কষ্টে আছে। এ বিক্ষুব্ধ মানুষগুলো ধৈর্য ধরে আছে। তারা যে কোনো দলের জনসমাগম, ঢল, স্রোত; এসবের সঙ্গে মিশে গেছে তা নয়। ব্রিটেনে কস্ট অব লিভিং এতো বেড়ে গেছে যে ৪০ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ব্রিটেনের জনগণ অ্যাকশন চায়, তারা সরকারের পতন চায়নি। আমেরিকায়ও একই অবস্থা। সেখানে বাইডেনের পদত্যাগ তো কেউ দাবি করে না। রেকর্ড সেখানে হয়ে গেছে কস্ট অব লিভিং। একটা সংকট সৃষ্টি হয়েছে আমরা তার মূল্য দিচ্ছি। আমাদের অবস্থান যুদ্ধের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে। আমরা এর ভুক্তভোগী।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি আন্দোলন করুক। আওয়ামী লীগকে নেত্রী (শেখ হাসিনা) বলে দিয়েছেন, তোমরা বাধা দেবে না। আমরা কাউন্টার করবো না। এখন পর্যন্ত কোনোটার কাউন্টার করিনি। আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সম্মেলন করছে। আমরা কাউন্টার প্রোগ্রাম করছি না। আমরা জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে আমাদের উপজেলা পর্যন্ত কাউন্সিল করছি। আমাদের ভুল-ত্রুটি ধরতে পারেন, তবে এদেশে আমরাই একমাত্র দল যারা গণতন্ত্রের চর্চা করি। আমাদের ওয়ার্ড থেকে জেলায় সম্মেলন হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেন, বিএনপির চেতনায় গণতন্ত্র নেই, আপনাদের বলতে চাই, গণতন্ত্রের কথা বলে যাদের ঘরে গণতন্ত্র নেই। কেন সাত ধারা (বিএনপির দলীয় গঠনতন্ত্রের) তুলে দিলো, সাত ধারায় কি আছে, দণ্ডিত ব্যক্তি দলীয় প্রধান হতে পারবেন না। দুর্নীতিবাজ দলীয় প্রধান হতে পারবেন না, সে সাত ধারাটা হঠাৎ করে তুলে দিলো। এক কলমের খোচায় তুলে দিলো। ফখরুল সাহেবের কি মনে আছে কবে তার দলের কাউন্সিল হয়েছে। এর মধ্যে আমাদের দুইটা হয়ে গেছে, তৃতীয়টা হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে আপনি (ডেইলি স্টারের সম্পাদকে উদ্দেশ্য করে) মাহফুজ ভাই ফখরুল সাহেবকে জিজ্ঞাসা করুন সম্মেলনটা কবে হচ্ছে, আমি আপনাকে সম্পাদক হিসেবে বলছি। তাকে জিজ্ঞাসা করুন তোমার দলের সম্মেলন কবে হয়েছে। তোমার দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভা কবে হয়েছে। কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির একটা সভা হয়েছিল লা মেরিডিয়ান হোটেলে তাও অনেক দিন হয়ে গেছে। ৫০০ লোকের জাম্মু জেট মার্কা একটা কমিটি। আমরা ৮১ সদস্যের কমিটি গতবারও করেছি।
আগামীবারও বোধ হয় ৮১ জন হবে। আমরা প্রতি দুই মাসে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি, প্রতি মাসে সম্পাদকমণ্ডলীর সভা করি। প্যান্ডামিকের সময়ও সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় বসেছি। শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় কমিটি রেগুলার ছিল না, কিন্তু এখন আমরা কেন্দ্রীয় কমিটি রেগুলার বসছি। তাদের কোনো ওয়ার্ড, কোনো ইউনিয়ন, কোনো জেলা, কোনো উপজেলায় কোনো সম্মেলন আছে। এ দলকে গণতান্ত্রিক দল বলবো কীভাবে। ওরা কি গণতান্ত্রিক আন্দোলন করবে, নিজের ঘরেই গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্রের চর্চা করতে হবে। আপনাদের মনে রাখতে হবে তারা ওয়াল তৈরি করেছিল, ব্রিজ তৈরি করেনি। ব্রিজ তৈরি করতেই হবে, ওয়াল দিয়ে চলবে না। আমাদের ব্রিজ তৈরি করতে হবে, আপনাদের সহযোগিতা চাই। সামনের দিকে আমরা এগিয়ে যাবো। আজকে আমাদের মূল এজেন্ডা এদেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে। এটাই শেখ হাসিনার এজেন্ডা। সামনে নির্বাচন একটা দল এতোদিন ক্ষমতায় ছিল। কি দেখাবে তারা। উন্নয়নের একটা দৃশ্যমান কিছু তারা কি জনগণকে দেখাতে পারবে। আজকে পদ্মা সেতু হয়েছে। সামনে মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, ঢাকা থেকে এলেঙ্গা ছয় লেন রাস্তা প্রস্তুত হয়ে আছে। আরও অনেক কাজ প্রস্তুত হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, কৌশলগত কারণে অনেক ধরনের ঐক্য আতাত এদেশে হয়। সেখানে নির্বাচনী রাজনীতির খেলা। আমাদের বিরুদ্ধে একটা জোট হচ্ছে। আমাদেরও এখানে একটা জোট করতে হবে। এসব আছে, এখন আপনি যদি বলেন একেবারে ডিভাইসি হয়ে যাও, পোলারাইজড হয়ে যাও; তাহলে তো চলতে পারবো না। তাহলে ৯৬ তে আমরা জয়ী হতাম না। ডিজিটাল যে অ্যাক্ট হলো এটা কিন্তু আমি সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছিলাম, সরকারের অনুমতি ছাড়া সাংবাদিকদের নামে মামলা চট করা উচিত না।
সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, গণমাধ্যম সমাজকে সঠিক চিন্তা করতে সহায়তা করে, গণমাধ্যম সমাজকে সঠিক খাতে প্রবাহিত করতে পারে। আবার গণমাধ্যম যদি চেষ্টা করে, সমাজে ভুল বার্তাও দিতে পারে। পৃথিবীর কোনো সরকার দাবি করতে পারবে না শতভাগ নির্ভুল কাজ করেছে অথবা করবে। আমাদেরও ভুল ত্রুটি আছে। সেই ভুল ত্রুটিগুলোকে যদি অনেক বড় করে দেখানো হয়, অর্জনগুলোকে যদি ছোট করে দেখানো হয়; তাহলে সমাজে সঠিক চিত্র প্রস্ফুটিত হয় না। আমরা গণমাধ্যমের সহায়তা চাই। কারণ গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ব।
হাছান মাহমুদ বলেন, গণমাধ্যমের সহায়তা ছাড়া বহুমাত্রিক সমাজ ব্যবস্থা, গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা বিতর্ক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার ভিত গভীরে পতিত হয় না। আমাদের ভুল-ত্রুটি অবশ্যই তুলে ধরবেন, একই সঙ্গে এ যে দেশটা বদলে গেলো, বিশ্বব্যাপী প্রশংসা বাংলাদেশের জন্য… বিশ্বব্যাংক প্রশংসা করে, জাতিসংঘ প্রশংসা করে, সেটি বড় আকারে গণমাধ্যমে আসে না। আমরা এক্ষেত্রে সহযোগিতা চাই।