খেলাধুলা আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় খেলাগুলোর মধ্যে একটি ফুটবল বিশ্বকাপ। প্রতি চার বছর পরপর আসে ফুটবল বিশ্বকাপ। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দলের লাখ লাখ সমর্থক রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল। গ্রাম ও শহরের মানুষ চলে যায় একসঙ্গে খেলা দেখতে বিভিন্ন জনবহুল যায়গায়, যেখানে সাধারণত প্রজেক্টর দিয়ে খেলা উপভোগ করার সুযোগ হয়।
উদ্বেগের বিষয় হলো, ফুটবল বিশ্বকাপ এলেই শুরু হয় বিভিন্ন অসুস্থ প্রতিযোগিতা। যেমনটা কে কত বড় পতাকা তৈরি করতে পারে, বাড়িতে বা দেওয়ালে কত বেশি রং করা যাবে নির্দিষ্ট দলের, কত ওপরে পতাকা উত্তোলন বা টানানো যায়, বিপক্ষ দলকে ফেসবুকে কীভাবে কটূক্তি করা যায়, বিপক্ষ দল নিয়ে কীভাবে মিছিলে মজা করা যায়, কার সামনে কে পতাকা, ব্যানার টানাবে ইত্যাদি।
এমন সব অতি আবেগের ফলে দেখা যায় অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এমনকি অনেকের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে। প্রতিবারই আবেগের আতিশয্যে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বিভিন্ন দলের সমর্থকেরা :পতাকা রাঙাতে গিয়ে, যানবাহনে শোডাউন করতে গিয়ে, এমনকি নিজ দলের জয়লাভের পর উৎসব-আয়োজন করতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে প্রতি বছর।
উপরন্তু, ফুটবল বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে চলে জুয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন অবৈধ কার্যক্রম, যেটা তরুণদের সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করে। এই জুয়াকে কেন্দ্র করে অনেকে রাতারাতি কোটিপতি বনে যায় বলে জনশ্রুতি আছে! আবার অনেকে হয়ে যায় নিঃস্ব। এসবের থেকেও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, জুয়াকে কেন্দ্র করে মারামারি-খুনাখুনি পর্যন্ত হয়ে থাকে, যখন টাকাসহ বিভিন্ন কিছুর হিসাব উভয় পক্ষের না মেলে। এমনকি টাকা জোগাতে গিয়ে অনেকে চুরি-ছিনতাই করতেও পিছপা হয় না। এবং পরে এটাই পেশা ও নেশা হিসেবে মেনে নেয়।
ফুটবল বিশ্বকাপ চার বছর পরপর আমাদের মাঝে আসে। আমরা সবাই মিলে উপভোগ করব এটাই হওয়া উচিত। বিভিন্ন দলের সাপোর্টার থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই সাপোর্টকে কেন্দ্র করে যখন নিজেদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়, মারামারি-খুনাখুনি হয়, তখন এটা আর স্বাভাবিক কোনো ঘটনা থাক না। এটা হয়ে যায় অতি আবেগের, কষ্টের, যন্ত্রণার। বিগত সালগুলোতেও আমরা দেখতে পেয়েছি কীভাবে খেলাকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে শত্রুতা তৈরি হচ্ছে অহরহ, যেটার ফলাফল অনেক সময়ই অনাকাঙ্ক্ষিত হয়ে থাকে।
সুতরাং, আমাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। ফুটবলকে কেন্দ্র করে নিজেকে কোনো গর্হিত কাজে যুক্ত করা একান্তই ভুল সিদ্ধান্ত। আমরা যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু করি ফুটবলকে কেন্দ্র করে, এগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এছাড়া যেখানে বড় স্ক্রিনে খেলা দেখানো হয়, সেখানটা অবশ্যই প্রসাশনের দায়িত্বশীল লোকজনের নজরদারিতে রাখতে হবে। কেননা, যেখানে মানুষের সংখ্যা বেশি, সেখানে ঝামেলাও বেশি হয়। ফুটবল বিশ্বকাপের একেকটা ম্যাচ হোক কিছু সময় আমাদের আনন্দ, উৎসব এবং বিনোদন দেওয়ার মাধ্যম। এবারের বিশ্বকাপ সবার জন্য হয়ে উঠুক আনন্দ-উচ্ছ্বাসের কেন্দ্রবিন্দু। এর পরিবর্তে কোনো দুর্ঘটনা-দুঃসংবাদ কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়।