অপরদিকে, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার জন্য রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল নামক একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। সেখানে তারা প্রতি বছর ৫ লাখ টিইইউ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, ঐ টার্মিনালটিতে বছরে ২ লাখ টিইইউ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা যাবে। ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা আইএফসিকে এই প্রকল্পের জন্য ট্রানজেকশন এডভাইজারি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। আইএফসি তাদের ওয়েবসাইটে এ ঘোষণা জানিয়ে বলেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে অপারেটর নিয়োগের জন্য সংস্থাটি সরকারের পিপিপি কর্তৃপক্ষকে পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং হস্তান্তরের বিষয়ে অ্যাডভাইজারি সহায়তা দেবে। ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তারা এই কাজ শেষ করবে বলে জানিয়েছে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) কর্তৃপক্ষের পরিচালক আলী আজম আল আজাদ ইত্তেফাককে বলেছেন, আইএফসি ইতিমধ্যে পতেঙ্গা টার্মিনালের জন্য ট্রানজেকশন অ্যাডভাইজারি উপদেষ্টার কাজ শুরু করেছে। তাদের রিপোর্ট পাওয়ার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। তবে বে টার্মিনালের ট্রানজেকশন অ্যাডভাইজারির কাজটি এখনো আইএফসি শুরু করতে পারেনি বলে তিনি জানান। এক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা রয়েছে বলে তিনি জানান।
এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন টার্মিনালে বিদেশি কোম্পানি নিয়োগ করা হলে তা দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে। বিশেষ করে টার্মিনালগুলোর আশপাশে নৌ এবং বিমানঘাঁটি থাকায় এ বিষয়টি বিবেচনায় আনতে হবে বলে তারা জানান। এছাড়া বিদেশি কোম্পানিগুলো স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশ থেকে কোটি কোটি টাকার মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে যাবে—যা এই মুহূর্তে দেশের অর্থনীতির জন্য হুমকি। এছাড়া গত কয়েক বছরে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজটি করছে। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের রাজস্ব আদায় যেমন বেড়েছে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসার পরিবেশও সহজ হয়েছে।
বন্দর ব্যবহারকারীদের কয়েকজন ইত্তেফাককে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের মাইলফলক সৃষ্টি শুরুতে খুব সহজ ছিল না। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে সক্ষমতা বাড়ানোর পেছনে নৌমন্ত্রণালয়, বন্দরের কর্মকর্তা, শ্রমিক-কর্মচারী এবং বন্দর ব্যবহারকারীদের কঠোর পরিশ্রম রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর দক্ষ বন্দরে পরিণত হয়েছে কর্তৃপক্ষের কিছু ইতিবাচক ও সাহসী সিদ্ধান্তের ফলে।’ বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. শাহজাহান এ বিষয়ে বলেন, বন্দরের দখলকৃত জায়গা উদ্ধার করে সেখানে ইয়ার্ড বানানো হয়েছে। একসময় বন্দরে মোট ৪৯ হাজার ১৮ টিউজ কনটেইনার রাখা যেত। এখন সেটির সক্ষমতা ৫৩ হাজার ৫১৮টিউজ কনটেইনার রাখা যায়। তিনি জানান, বর্তমানে বন্দরে ৩৪ হাজার ২২৬ টিউজ কনটেইনার রয়েছে। শ্রমিকরা এখন বেসরকারি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে থাকায় কথায় কথায় ধর্মঘট নেই বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, এর আগে বন্দরের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ইয়ার্ড এবং অপারেটর দিয়ে সিসিটির গ্যান্ট্রি ক্রেন (কিউজিসি) পরিচালনা হতো। জাহাজের ওপর ও নিচের অপারেশনাল কাজ হতো স্টিভিডোর শ্রমিক ও ডক শ্রমিকের মাধ্যমে। জাহাজের হুক পয়েন্ট থেকে কনটেইনার ইয়ার্ড পর্যন্ত পরিবহন হতো বেসরকারি ট্রেইলর কন্ট্রাক্টর দিয়ে। তখন একটি কনটেইনার খালাস নিতে অথবা জাহাজে তুলতে আড়াই হাজার টাকা খরচ পড়ত। ২০০৭ সালের পরে বেসরকারি খাত যুক্ত হওয়ার ফলে বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পৃক্ততা ছাড়াই খরচ নেমে আসে ১ হাজার ২০০ টাকায়। আগে যেখানে গ্যান্ট্রি ক্রেনের মাধ্যমে ঘণ্টায় ১০ থেকে ১২টি কনটেইনার হ্যান্ডলিং হতো সেখানে বেসরকারি কোম্পানি দায়িত্ব নেওয়ার পর ২৫ থেকে ৩০ কনটেইনারে উন্নীত হয়।