চট্টগ্রামে চিনির দাম অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। বাজার থেকে একপ্রকার উধাও হয়ে গেছে ৯৫ টাকা দামের প্যাকেটজাত চিনি। কিছু কিছু দোকানে পাওয়া গেলেও তা বিক্রি হচ্ছে নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি প্রতিকেজি ১১৫ টাকা। ব্যবসায়ীদের চাপে গত এক মাসে দুই দফায় চিনির কেজি ২০ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। মঙ্গলবার প্রতিকেজি চিনির দাম ছিল খুচরা বাজারে ১০০ টাকা থেকে ১০৫ টাকা পর্যন্ত। তবুও মিলছে না সরকার নির্ধারিত দামে চিনি।
সরকার প্রতিকেজি খোলা চিনির দাম ৯০ টাকা বেঁধে দিলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকা থেকে ১১৬ টাকায়। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, মিলাররা একদিকে চিনির দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। অন্যদিকে কমিয়েছেন সরবরাহও। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে চিনির দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়ার পরপরই চিনি মজুত শুরু করেন। এর ফলে বাজার থেকে চিনি অনেকটা উধাও হয়ে গেছে। বাজারে চাহিদার অর্ধেকও চিনি নেই। এ সুযোগে ব্যবসায়ীরা চিনির দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত মুনাফা লুটে নিচ্ছেন। সরকার নির্ধারিত দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে না চট্টগ্রামের পাইকারি ও খুচরা বাজারের কোথাও।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত চিনির দাম বেড়েছে। স্থানীয় পরিশোধনকারী মিলগুলোতে উৎপাদন খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে। ডলার সংকটে এলসি খুলতে না পারায় চিনির কাঁচামাল আমদানি হচ্ছে কম। আবার গ্যাস সংকটের কারণে মিলগুলোতে আশানুরূপ চিনি উৎপাদন করা যাচ্ছে না। ফলে অপরিশোধিত চিনির আমদানি কমে গেছে। এ কারণে বাজারে চিনির সরবরাহও কমায় দাম বেড়ে গেছে।
চিনির সরকার নির্ধারিত দর নির্ধারিত রয়েছে প্রতিকেজি ৯০ টাকা। কিন্তু খোলাবাজারে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকা। একদিন আগেও খোলাবাজারে চিনি বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ১০৫ টাকা দরে। একদিনের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে চিনির দাম। অনেক মুদি দোকানে টাকা দিয়েও চিনি মিলছে না। অভিযোগ আছে, অনেক ব্যবসায়ী অতি মুনাফার লোভে চিনি মজুদ করেছেন। পাইকারি বাজারেও বাড়ানো হয়েছে দাম।
বুধবার চট্টগ্রামের প্রধান পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ-চাক্তাইয়ে চিনি অস্বাভাবিক মূল্যে বিক্রি হয়। প্রতিবস্তা চিনির দাম ৩০০ টাকা থেকে সাড়ে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পাইকারি বাজারে বস্তাপ্রতি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৪০০ টাকায়। একদিন আগে মঙ্গলবার খাতুনগঞ্জে প্রতিবস্তা চিনির দাম ছিল ৫ হাজার ১শ টাকা। সে সময় খুচরা বাজারে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হয়েছে ১০২ টাকা। এরও আগে ১৬ অক্টোবর খাতুনগঞ্জে প্রতিবস্তা (৫০ কেজি) চিনি ৪ হাজার ২শ থেকে ৪ হাজার ৩শ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। ওই সময় পাইকারিতে কেজিপ্রতি চিনি বিক্রি হয়েছিল ৮৪ থেকে ৮৬ টাকা। ২৩ অক্টোবর পাইকারি বাজারে প্রতিবস্তা চিনি ৪ হাজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়। ওই সময় পাইকারি বাজারে চিনির দাম ছিল কেজি ৯৫ টাকার কিছু বেশি।
সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত চিনির দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং স্থানীয় পরিশোধনকারী মিলগুলোর উৎপাদন খরচ বিবেচনায় নিয়ে গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর চিনির দাম বাড়ায় বাংলাদেশ সুগার রিফাইনারস অ্যাসোসিয়েশন। তখন প্রতিকেজি খোলা চিনির খুচরা মূল্য ছিল ৭৪ টাকা ও প্যাকেটজাত মূল্য ছিল ৭৫ টাকা। তখনও প্রতিকেজি চিনি ৮০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। নানা অজুহাত দেখিয়ে সংগঠনটি আবারও চিনির দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়। ২২ সেপ্টেম্বর খোলা চিনির কেজি ৮৪ এবং প্যাকেটজাত চিনির দাম ৮৯ টাকা নির্ধারণ করে দেয়, যা ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর করতে বলা হয়। এর ১২ দিনের মাথায় ৬ অক্টোবর ফের দাম বাড়ানো হয় পণ্যটির। এ দফায় কেজিতে আরও ৬ টাকা বাড়িয়ে প্রতিকেজি খোলা চিনি ৯০ এবং প্যাকেটজাত চিনির দাম ৯৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সে হিসাবে দুই দফায় খোলা চিনির দাম কেজিতে ১৬ এবং প্যাকেটজাত চিনির দাম ২০ টাকা বাড়ানো হয়। এখন সরকার নির্ধারিত দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে না।
চাক্তাই শাহ আমানত স্টোরের মালিক লিয়াকত আলী জানান, ‘মিল মালিক ও আমদানিকারকরা চিনির দাম বাড়িয়েছেন। আমাদের করার কিছুই নেই। মিলাররা একদিকে চিনির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে সরবরাহও কমিয়ে দিয়েছে। ফলে হু হু করে দাম বাড়ছে। মিলারদের কাছ থেকে পাইকারি হিসাবে ১০৮ টাকা দামে প্রতিকেজি চিনি কিনতে হচ্ছে।’