আইএমএফের দলটি গত ২৬ অক্টোবর থেকে গতকাল পর্যন্ত প্রায় ৩০টি বৈঠক করেছে। বেশির ভাগ বৈঠকই ছিল আর্থিক খাতের সঙ্গে সম্পর্কিত মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার সঙ্গে। এই কদিনে যেসব বৈঠক হয়েছে, সেগুলোর সার-সংক্ষেপ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে অনুষ্ঠিত গতকালের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক জি এম আবুল কালাম আজাদ গতকাল মুঠোফোনে বলেন, আইএমএফের দলটি ঢাকায় আসার পর থেকে যেসব বৈঠক করেছে এবং সেগুলোতে যেসব পর্যবেক্ষণ ঊঠে এসেছে, তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে। এটি ছিল মূলত থ্যাংকস গিভিং (ধন্যবাদ বিনিময়) বৈঠক। তাদের প্রধান পরামর্শ জানা যাবে আগামীকাল (আজ)।
আইএমএফের দল এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভের হিসাবায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে বলেছিল। রিজার্ভের অর্থে রপ্তানিকারকদের জন্য ৭০০ কোটি টাকায় যে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, তা বাদ দিয়ে প্রকৃত হিসাব চায় আইএমএফ।
আগের বৈঠকগুলোতে ব্যাংকে সুদহারের সীমা প্রত্যাহার, মুদ্রানীতির কাঠামো পরিবর্তন, অর্থাৎ বছরে আপাতত দুইবার ও পরে চারবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করা, সঞ্চয়পত্রে সুদের হার যৌক্তিক করা, প্রবাসী আয়ে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা তুলে দেওয়া, ব্যাংকের সম্পদের প্রকৃত মান বের করা, খারাপ হয়ে যাওয়া ব্যাংকের সম্পদের তথ্য নিয়মিত প্রকাশ করার পক্ষে আইএমএফ কথা বলেছে।
আইএমএফ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন ও নিরাপত্তা সঞ্চিতির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক প্রথা অনুসরণ, খেলাপি ঋণ কমাতে কৌশল প্রণয়ন এবং সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমাতে ও মূলধন বাড়াতে সমঝোতা চুক্তি অব্যাহত রাখার কথা বলে আসছে।
এদিকে প্রায় দুই সপ্তাহের বৈঠক শেষে আজ বিকেলে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করবে আইএমএফের প্রতিনিধিদল। এতে সংস্থাটি বাংলাদেশ যে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে, সেই ঋণের বিপরীতে কিছু শর্তের ইঙ্গিত দিতে পারে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি আজ আলাদা সংবাদ সম্মেলন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, যে বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার ও অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিনের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
আইএমএফের দলটির সদস্যদের একাংশ আগামীকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা ছাড়বে এবং ফিরে গিয়ে ঢাকা সফরের সার্বিক দিক তুলে ধরবে সংস্থাটির পরিচালনা পর্ষদে। আইএমএফ পর্ষদ অনুমোদন করলে দ্রুততম সময়েই বাংলাদেশ ঋণের প্রথম কিস্তি পেতে পারে। অবশ্য তা নির্ভর করবে আইএমএফ কী কী শর্ত দেয় এবং তা বাংলাদেশ কতটুকু বাস্তবায়ন করে, তার ওপর।