নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র অর্থ বিষয়ক সমন্বয়ক ও হিজরত বিষয়ক সমন্বয়কসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। পাহাড়ে উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডে জড়িত এই চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদে মিলেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ২০১৯ সালে জঙ্গি কর্মকাণ্ড শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিতে দুই দফায় ২৯ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন গ্রেফতাররা।
শুক্রবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন র্যাবের মিডিয়া বিভাগের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
গ্রেফতাররা হলেন- আব্দুল কাদের ওরফে সুজন ওরফে ফয়েজ ওরফে সোহেল (২৪), ইসমাইল হোসেন ওরফে হানজালা ওরফে মানসুর (২২), মুনতাছির আহম্মেদ ওরফে বাচ্চু (২৩) ও হেলাল আহমেদ জাকারিয়া (৩৩)।
র্যাবের এই মুখপাত্র দাবি করেছেন, নতুন এই জঙ্গি সংগঠনটি তাদের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিতে দুই দফায় পার্বত্য অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ২৯ লাখ টাকা দিয়েছে। পাশাপাশি তাদের সঙ্গে প্রশিক্ষণের জন্য তারা চুক্তিও করেছিল। এই চুক্তি বাদেও তাদের প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতে হতো। গ্রেফতাররা র্যাবের কাছে দেওয়া প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতার সোহেল ও হানজালা তিন বছর থেকে এই জঙ্গি সংগঠনে আছেন। এই সংগঠনের আমির হলেন আনিসুর রহমান। দুই বছর আগে তিনি কুমিল্লার একটি সিএনজি স্টেশনে ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সবশেষ এক বছর আগে আনিসুর রহমান কুমিল্লায় থাকা নিজের একটি বাড়ি ১৭ লাখ টাকায় বিক্রি করে পার্বত্য অঞ্চলে চলে যান। সেই বাড়ির টাকায় আনিসুর বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির পাহাড়ে সাড়ে তিন বিঘা জমি কেনেন। এরপর সেখানে একটি বাড়ি কিনে সংগঠনের নানা কাজ পরিচালনা করতে থাকেন।
এছাড়া গ্রেফতার হানজালা ও সোহেল দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা সদস্যদের সমন্বয়, প্রশিক্ষণ ছাড়াও তাদের আনিসুরের বাসায় এনে অস্ত্র ট্রেনিং দেওয়ার ব্যবস্থা করতেন।
র্যাবের মিডিয়া বিভাগের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, আমরা গ্রেফতারদের মহিলা শাখার সদস্যদেরও তথ্য পেয়েছি। যারা ডোনেট থেকে শুরু করে বিভিন্নভাবে সংগঠনের দাওয়াতি কাজে জড়িত। পাহাড়ে যারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে তাদের পরিবারের নারী সদস্যদের পাশে দাঁড়ানোর কাজ করে আসছিল এই মহিলা শাখার সদস্যরা।
অস্ত্র কিনতে ২৯ লাখ টাকা দেওয়া হয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের!
জঙ্গি সদস্যদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিতে পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দুই দফায় ১২ লাখ ও ১৭ লাখ টাকাসহ মোট ২৯ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। সংগঠনটির আরেক সদস্য জাকারিয়া মূলত পথে গাড়ি দিয়ে খাবার বিক্রি করতেন। তিনি এই খাবার বিক্রির লাভের টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাহাড়ে ট্রেনিং নেওয়া ব্যক্তিরে কাছে পাঠাতেন। গ্রেফতার রাকিবের মাধ্যমে ১৭ লাখ টাকা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কাছে পাঠায় এই জাকারিয়া। তিনি তিন বছর আগে মানিকের মাধ্যমে সংগঠনে যুক্ত হন। পরে সামরিক শাখার প্রধান রনবীরের অন্যতম সহযোগী ও সিলেট শাখার সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন এই জাকারিয়া। এছাড়াও সামরিক শাখার প্রধানসহ মানিককে তিনি বিভিন্ন স্থানে নিজের মোটরসাইকেলে করে পৌঁছে দিতেন।
র্যাব জানিয়েছে, হরকাতুল জিহাদ, জেএমবি এবং আনসার আল ইসলামের বেশকিছু সদস্য ২০১৭ সালে নতুন একটি উগ্রবাদী সংগঠনের কার্যক্রম শুরু করে। পরে ২০১৯ সালে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নামে নামকরণ করে কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে তারা। হুজিবি, জেএমবি ও আনসার আল ইসলাম নিষিদ্ধ হওয়ায় এসব সংগঠন থেকে সদস্য সংগ্রহ ও অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা দুরূহ হয়ে পড়েছিল। এ কারণে এসব সংগঠন থেকে বের হয়ে নতুন এই উগ্রবাদী সংগঠনের কার্যক্রম শুরু করে।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে কুমিল্লা থেকে বেশ কয়েকজন তরুণ উগ্রবাদে আগ্রহী হয়ে বাড়ি ছাড়ে। পরে তাদের খোঁজে মাঠে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর গত ৬ অক্টোবর মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহ এলাকায় অভিযান চালিয়ে নিখোঁজ চারজনসহ মোট সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়াও গত ১০ অক্টোবর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও কেরানীগঞ্জ থেকে পাঁচজনকে, ২১ অক্টোবর রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠনটির শূরা সদস্য সৈয়দ মারুফ আহমদ ওরফে মানিকসহ সাতজন এবং পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের তিনজনসহ মোট ১০ জনকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ গ্রেফতার করে র্যাব।