প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সমবায় আন্দোলন সরকারের লক্ষ্য পূরণে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, সমবায় জাতীয় অর্থনীতিতে কৃষি, মৎস্য, পশুপালন, পোশাক, দুগ্ধ উৎপাদন, আবাসন, ক্ষুদ্র ঋণ ও সঞ্চয়, কুটির-চামড়াজাত-মৃৎ শিল্প ইত্যাদি খাতের বিকাশ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে উন্নয়নসহ ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীকে স্বাবলম্বী করতে বিশাল অবদান রাখছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য সমবায় আন্দোলন সব শ্রেণির মানুষের সমতাভিত্তিক উন্নয়ন ঘটিয়ে আমাদের সরকারের লক্ষ্য পূরণে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।’
প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সমবায় দিবস উপলক্ষ্যে শুক্রবার (৪ নভেম্বর) এক বাণীতে এসব কথা বলেন।
‘বঙ্গবন্ধুর দর্শন, সমবায়ে উন্নয়ন’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শনিবার (৫ নভেম্বর) সারা দেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় ৫১তম ‘জাতীয় সমবায় দিবস’ পালিত হচ্ছে জেনে সন্তোষ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা এ উপলক্ষ্যে দেশের সব সমবায়ী ও সমবায়বান্ধব জনগণকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
তিনি বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধানের ১৩(খ) নং অনুচ্ছেদে সমবায়কে সম্পদের মালিকানার দ্বিতীয় খাত হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন এবং সমবায়কে গণমুখী আন্দোলনে পরিণত করার ডাক দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, তিনি দেশের জনগণের পুষ্টি চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে দরিদ্র, ভূমিহীন, নিম্নবিত্ত দুগ্ধ উৎপাদনকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণপূর্বক তাঁদেরকে সমবায়ের মাধ্যমে সুসংগঠিত করতে ১৯৭৩ সালে ‘সমবায় দুগ্ধ প্রকল্প’ নামে একটি দুগ্ধ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে পাঁচটি দুগ্ধ উৎপাদনকারী এলাকায় দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা স্থাপন করেন। আজকের মিল্ক ভিটা তারই সুদূরপ্রসারী উদ্যোগের ফসল।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, জাতির পিতা সমবায় পদ্ধতিতে সমন্বিত/যৌথ কৃষিখামার প্রচলনের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়নের পাশাপাশি স্থানীয় রাজস্বে পল্লী উন্নয়ন করতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেন, জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আওয়ামী লীগ সরকার সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের সঙ্গে সঙ্গে পল্লী উন্নয়নে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন প্রশিক্ষণ কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করি এবং পরে ২০১২ সালে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ একাডেমিতে রূপান্তরিত করি। দারিদ্র্য বিমোচন, সামাজিক অগ্রগতি ও নারী-পুরুষ সমতার উদ্দেশ্যে পল্লী-দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন আইন-১৯৯৯ প্রণয়নের মাধ্যমে ফাউন্ডেশনটি প্রতিষ্ঠা করি। সমবায় সমিতি আইন-২০০১ এবং জাতীয় সমবায় নীতিমালা-২০১২ প্রণয়ন করি। আমরা পুনরায় সমবায় সমিতি (সংশোধন) আইন-২০১৩ এবং বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড আইন, ২০১৮ প্রণয়ন করি। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর ‘আমার বাড়ি, আমার খামার প্রকল্প’ গ্রহণ করি এবং এ প্রকল্পের আওতায় পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করি- যেখানে মোট ১ লাখ ২০ হাজার ১৩৮টি সক্রিয় গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গঠন করা হয়েছে এবং যার উপকারভোগী সক্রিয় সদস্য সংখ্যা প্রায় ৫২ লাখ ৪৪ হাজার।’
তিনি বলেন, গ্রামের সাধারণ মানুষের আয় বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে উন্নত গ্রামীণ জীবনযাপনের সুযোগ সৃষ্টি এবং গ্রাম থেকে শহরমুখী জনস্রোত কমাতে প্রাথমিকভাবে দেশের নয়টি জেলার দশটি গ্রামে ‘বঙ্গবন্ধুর গণমুখী সমবায় ভাবনার আলোকে বঙ্গবন্ধু মডেল গ্রাম প্রতিষ্ঠা পাইলট প্রকল্প’ গ্রহণ করা হয়েছে। তাছাড়া দুগ্ধ উৎপাদন ও দুগ্ধ শিল্পের প্রসারে ‘দুগ্ধ ঘাটতি উপজেলায় দুগ্ধ সমবায়ের কার্যক্রম সম্প্রসারণ’ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমরা সমবায় খাতে বাজেট বৃদ্ধি করেছি, সমবায়ীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করছি, আর্থিক ও উপকরণ সহায়তার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনসহ সমবায়ীদের জীবনমান ও সামাজিক ক্ষেত্রে উত্তরোত্তর উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। আমাদের প্রচেষ্টায় সমবায় সমিতি এবং সমবায়ীদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে সমিতি ১ লাখ ৯২ হাজার ৬৯২টি এবং সদস্য ১,২০,৪২,০৯৫ জনে উন্নীত হয়েছে।’
তিনি সমবায় আন্দোলন জোরদার হওয়ার পাশাপাশি ৫১তম জাতীয় সমবায় দিবস উপলক্ষে গৃহীত সব কর্মসূচির সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করেন।