ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন প্রকল্পের আওতায় আগামী বছরের মার্চ থেকে দেশে জ্বালানি তেল বা ডিজেল আমদানি করা হবে। পাইপলাইন নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে প্রথম তিন বছর দুই লাখ মেট্রিক টন, পরের তিন বছর তিন লাখ মেট্রিক টন, এর পরের চার বছর পাঁচ লাখ মেট্রিক টন এবং অবশিষ্ট পাঁচ বছরে ১০ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি তেল আমদানি করা যাবে।
দেশের মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড ও ভারতের নুমালীগড় রিফাইনারি লিমিটেড এ প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে।
ভারত থেকে জ্বালানি তেল আমদানির লক্ষ্যে ২০২০ সালে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। ভারতের নুলাইবাড়ি রিফাইনারি লিমিটেড থেকে দিনাজপুরের পার্বতীপুর তেল ডিপো পর্যন্ত ১৩১ দশমিক ৫০ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানোর পরিকল্পনা করা হয়, যার মধ্যে ভারতের অংশে রয়েছে পাঁচ কিলোমিটার আর বাংলাদেশের অংশে ১২৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার।
২০১৭ সাল থেকে নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড (এনআরএল) থেকে রেলওয়ের মাধ্যমে প্রতি মাসে প্রায় ২২শ টন ডিজেল আমদানি করছে বিপিসি। ট্রেনে করে এ তেল পার্বতীপুরের ডিপোতে পৌঁছাতে সময় লাগে এক মাস। তবে পাইপলাইন প্রকল্প বাস্তবায়নের পর ভারত থেকে পার্বতীপুর রেল ডিপোতে ডিজেল আসতে সময় লাগবে মাত্র কয়েক ঘণ্টা। এতে পরিবহন খরচ অনেকটাই কমে যাবে।
চুক্তি অনুযায়ী ভারত থেকে ১৫ বছর ডিজেল আনতে পারবে বলে জানিয়েছে বিপিসি।
পাইপলাইন প্রকল্পের পরিচালক টিপু সুলতান ঢাকা পোস্টকে বলেন, পাইপলাইনে শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে। ডিসেম্বর নাগাদ তা কমপ্লিট হবে। এখন ভারতের রিফাইনারি ও পাইপলাইনের সক্ষমতার ওপর নির্ভর করছে কতটুকু তেল আমরা আনতে পারব।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভারত থেকে তেল আনার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ লক্ষ্যে পার্বতীপুরের রেলহেড ডিপোর স্টোরেজ ক্যাপাসিটি বাড়ানো হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে আড়াই লাখ টন তেল আনার কথা রয়েছে, যা পর্যায়ক্রমে বাড়তে থাকবে। পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল আনা হলে আমাদের খরচ অনেকাংশে কমে যাবে। বাইরে থেকে তেল কিনতে জাহাজ ভাড়া ও আনুষঙ্গিকসহ ব্যারেলপ্রতি খরচ পড়ে ১০ ডলার। সেখানে পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল আনতে খরচ পড়বে ৮ ডলারের মতো। আমরা আশা করছি, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি বা মার্চের শুরুর দিকে পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে ডিজেল আনা শুরু করতে পারব।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারত থেকে জ্বালানি তেল আনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের তুলনায় প্রতি ব্যারেলে দুই ডলার কমলে এক লাখ টনে প্রায় ১৫ লাখ ডলার বা ১৫ কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব, যা বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে ভূমিকা রাখবে।
দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদার বড় অংশই হলো ডিজেল। প্রতি বছর প্রায় ৩৬ লাখ টন ডিজেল আমদানি করা হয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বজুড়ে জ্বালানির বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। স্পট মার্কেট থেকে উচ্চমূল্যে তেল ও এলএনজি গ্যাস কেনা বন্ধ করে দেয় সরকার। এমন অবস্থায় ভারত থেকে কম খরচে জ্বালানি তেল আমদানি চলমান সংকট নিরসনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইজাজ আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভারত থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল আমদানি বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক বিষয়। এতে আমদানির বিকল্প একটি উৎস তৈরি হচ্ছে। তবে আমরা যদি ডলারের পরিবর্তে রুপিতে লেনদেন করতে পারি, তাহলে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ কমে আসবে। পাশাপাশি জ্বালানি তেলের সংকটও অনেকাংশে কমে যাবে।