জানুয়ারির প্রথম দিনেই সব শিক্ষার্থীর হাতে পাঠ্যবই তুলে দিতে চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে চুক্তিভুক্ত প্রেস (ছাপাখানা) থেকে নির্ধারিত সময়ে পাঠ্যবই পেতে কঠোর হচ্ছে মন্ত্রণালয়। নির্ধারিত সময়ে কোনো ছাপাখানা বই দিতে ব্যর্থ হলে তাদের কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। একই সঙ্গে ওইসব প্রতিষ্ঠানের মালিকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়াসহ বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
২০২৩ সালের পাঠ্যবই বিতরণ সংক্রান্ত জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিভি) জরুরি সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এতে সভাপতিত্ব করেন। সভায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব আবু বকর ছিদ্দিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত উপস্থিত ছিলেন।
সভা সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের পাঠ্যপুস্তক তৈরিতে কাগজ মিল মালিকদের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে সেটি নতুনভাবে আর দাম বাড়ানো হবে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। এ বিষয়ে মিল মালিকদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বৈঠক করেন। তারা যেন নির্ধারিত সময়ে কাগজ সরবরাহ করেন সে বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী অনুরোধ জানিয়েছেন বলেও সভায় উল্লেখ করা হয়।
অন্যান্য সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে, যেকোনো ভাবেই হোক আগের মতোই বছরের প্রথম দিনে সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছাতে হবে। এক্ষেত্রে মিল মালিকদের কাগজের কৃত্রিম সংকট অথবা ছাপাখানা মালিকদের অপরাগতা মেনে নেওয়া হবে না।
যেসব ছাপাখানা নানা অজুহাত দেখিয়ে নির্ধারিত সময়ে পাঠ্যবই সরবরাহ করতে পারবে না, সেসব ছাপাখানাকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। একই সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকরা আগামীতে ছাপাখানার ভিন্ন নাম ব্যবহার করে যেন কাজ না পান, সেজন্য প্রতিষ্ঠানের মালিকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, যেসব ছাপাখানা মালিকরা নির্ধারিত সময়ে বিল না পাওয়ায় বই ছাপাতে অপারগতা জানিয়েছেন তাদের বিল দ্রুত পরিশোধ করতে হবে। একই সঙ্গে আগামীতে যেন এমন সংকট না হয় সেজন্য শতভাগ বই সরবরাহের পর ছাপাখানা মালিকদের পাওনার ৮০ শতাংশ পরিশোধ করা হবে। এছাড়া বাকি ২০ শতাংশ বিল ওয়েরেন্টি পিরিয়ডের মধ্যে পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বিশ্ববাজারে কাগজের দাম বেড়ে যাওয়ায় পাঠ্যবই তৈরিতে কাগজ সংকট দেখা দিয়েছে। দেশের মিল মালিকরাও এক ধরনের কৃত্রিম সংকট তৈরির অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। নির্ধারিত সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার বিষয়ে কোনো আপস হবে না। সে যেই হোন তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেন, তড়িঘড়ি করে দেওয়ার নামে ছাপাখানা মালিকরা যাতে নিম্নমানের বই সরবরাহ করতে না পারে সে বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আলাদা আলাদা কমিটি মাঠ পর্যায়ে নিয়মিত মনিটরিং করবে।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান আরও বলেন, আগামী বছরের জন্য ৩৫ কোটি পাঠ্যপুস্তক ছাপানো হবে। তার মধ্যে মাধ্যমিকের ২৩ কোটি বইয়ের মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র পাঁচ কোটি বই ছাপানো হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) থেকে প্রাথমিকের বই ছাপানোর কাজ শুরু হবে।
তিনি বলেন, বিনামূল্যের বই তৈরিতে প্রতি বছরের শেষের দিকে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হয়। কাগজ মিল মালিক ও ছাপাখানা মালিকদের কাছে এনসিটিবির এক ধরনের জিম্মি দশা পরিস্থিতি তৈরি হয়। সে কারণে প্রতিবছরের শুরুতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় যৌথভাবে বসে নতুন রূপরেখা তৈরি করবে। নির্ধারিত সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে বিদেশ থেকে কাগজ আমদানি ও আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হতে পারে বলেও জানান তিনি।
সভায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।