রংপুরের মাওলানা কেরামত আলী কলেজের জীববিদ্যা বিভাগের প্রদর্শক মাসুদা বেগমের বিরুদ্ধে মাসের পর মাস প্রবাসে থেকেও পুরো বেতন-ভাতা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। কলেজটির সাবেক অধ্যক্ষ ও বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মনোয়ার হোসেন বড় ভাই হওয়ার সুবাদে পরিবারসহ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেও মাসুদা চাকরিতে বহাল রয়েছেন। ব্যাংক থেকে তুলছেন বেতন-ভাতাও। বর্তমান অধ্যক্ষসহ কলেজটির পরিচালনা পর্ষদকে ম্যানেজ করে মাসের পর মাস এভাবেই চাকরি করছেন মাসুদা বেগম।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রংপুর নগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের পীরজাবাদ এলাকার মাওলানা কেরামত আলী কলেজটি প্রতিষ্ঠাকালে ১৯৯১ সালে জীববিদ্যা বিভাগে প্রদর্শক হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন মাসুদা বেগম। আর ওই কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ ছিলেন তার বড় ভাই মনোয়ার হোসেন। বছর দেড়েক আগে অবসরে যান মনোয়ার হোসেন। এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
স্বামী প্রবাসী হওয়ায় ২০১৪ সাল থেকে বেশিরভাগ সময় যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন মাসুদা। এর মাঝে কয়েকবার দেশে আসলেও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে টানা সেখানে অবস্থান করছেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজটির একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, মাসুদা বেগম মাঝেমধ্যে পরীক্ষা চলাকালে উপস্থিত থাকলেও বাকি সময় তিনি কলেজে আসেন না। এতে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
এদিকে, কলেজ থেকে অর্ধবেতনে অসুস্থতাজনিত ছুটির কথা বলা হলেও মাসুদা বেগম ব্যাংক থেকে তুলছেন পুরো মাসের বেতন-ভাতা।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর না থাকলেও এমপিও শিটে তার সই রয়েছে। এমনকী শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর পাঠানো বাৎসরিক অঙ্গীকারনামাতেও সই রয়েছে মাসুদার।
সোনালী ব্যাংকের রংপুর কাচারি বাজার শাখা থেকে পুরো বেতন উত্তোলন করেছেন মাসুদা।
সার্বিক বিষয়ে শুরুতে কথা বলতে রাজি না হলেও ২০১৪ সাল থেকে বেশিরভাগ সময় মাসুদার স্বামীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের বিষয়টি স্বীকার করে কলেজটির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বারেক আলী বলেন, অর্ধবেতনে অসুস্থজনিত ছুটিতে গত ফেব্রুয়ারি থেকে টানা আমেরিকায় বসবাস করছেন মাসুদা বেগম।
অধ্যক্ষ বলেন, সাধারণত পরীক্ষা চলাকালে ছাড়া বছরের অন্যান্য সময় প্রদর্শকদের তেমন একটা কাজ থাকে না। মাসুদা বেগম পরীক্ষার সময় দেশে ফিরে দায়িত্ব পালন করেন। আগামী ডিসেম্বরে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
বেতন-ভাতা চলমান থাকার প্রক্রিয়া বৈধ কি না এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বেসরকারি কলেজে একবার বন্ধ করা হলে পরে বেতন উত্তোলনে নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়। এ কারণে তার বেতন-ভাতা বন্ধ করা হয়নি।
টানা আট মাস ধরে ছুটিতে প্রবাসে অবস্থানের বিষয়ে চাকরিবিধি কী, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত বিধান রয়েছে। তবে ছুটির দরখাস্ত দেখতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে তার মুখের কথাকেই বিশ্বাস করতে বলেন অধ্যক্ষ।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে মাসুদা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে কলেজটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মনোয়ার হোসেনের মোবাইলফোনে কল দিলে তিনি অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলতে বলেই সংযোগ কেটে দেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক এস এম আব্দুল মতিন লস্কর জাগো নিউজকে বলেন, মাসুদা বেগমের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। ওই কলেজের অন্য একটি বিষয়ে তদন্ত করতে গিয়ে তার বিষয়টিও উঠে এসেছে। আমরা সব বিষয়ে তদন্ত অব্যাহত রেখেছি। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ নিয়ে কোনো কিছু বলা যাচ্ছে না।