বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অমর গ্রন্থ ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবার অনুবাদ করা হয়েছে ত্রিপুরার ককবরক মাতৃভাষায়। অনুবাদ করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী যুবরাজ দেববর্মা। টানা দুই বছরের পরিশ্রমে ভূমিকা, টীকাসহ ৩০৩ পৃষ্ঠার পুরোটাই অনুবাদ করেছেন তিনি। প্রায় এক লাখ শব্দের এই গ্রন্থের নাম দিয়েছেন ‘পাইথাকয়া লাংমা’।
যুবরাজ দেববর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের একজন শিক্ষার্থী।
বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের শ্রীমঙ্গল ডলছুড়া ত্রিপুরাপল্লীতে জন্ম নেওয়া যুবরাজের দুই বছরের পরিশ্রমের ফসল এই ‘পাইথাকয়া লাংমা’ পান্ডুলিপিটি। তিনি বলেন, ‘২০১২ সালে বইটি প্রকাশের পর থেকেই আমার কাছে ভিন্ন রকম এক অনুভূতি কাজ করা শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর এত সুন্দর জীবনযাপন, সহজ-সরল-প্রাঞ্জল ভাষা আমাকে মুগ্ধ করেছিল। তখন থেকেই বই অনুবাদ করার আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। করোনা মহামারির কারণে পুরো বিশ্ব যখন নিঃস্তব্ধ, তখন থেকেই মূলত কাজ শুরু করি। এর আগে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও এটিকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।’
বইটি নিয়ে আগ্রহের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের মোট জনসংখ্যা দুই-আড়াই লাখের মতো। আমাদের ভাষাটি এই সময়ে এসে হারিয়ে যেতে বসেছে। সরকারি তেমন কোনো উদ্যোগ নেই ভাষা সংরক্ষণের ব্যাপারে। আবার বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনও আমাকে বেশ আকৃষ্ট করেছে। যার আন্দোলন সংগ্রামের কারণে আমরা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি। আমার জাতিদের সেসব জানা উচিত বলে আমি মনে করি। আর এভাবে আমার ভাষাও সমৃদ্ধ হবে, সেই সঙ্গে বিপন্ন হওয়ার হাত থেকেও বেঁচে যাবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন ২০২০ সালকে মুজিব শতবর্ষ ঘোষণা করেন তখন আমার নিজ জাতির পক্ষ থেকে কিছু করার ইচ্ছা জাগে। তাই অনুবাদের পথটি বেছে নেই। আর সেই অনুবাদের ফসলই ‘পাইথাকয়া লাংমা’।’
বর্তমানে যুবরাজ এটি প্রকাশের জন্য অনুমতির অপেক্ষায় আছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কিউরেটর, সাবেক শিক্ষা সচিব ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী নজরুল ইসলাম খানের সাথে ওনার সহকারির মাধ্যমে যোগাযোগ করেছি। তারা বলেছেন, আমাকে জানাবে। বাকিটা স্যারের সঙ্গে কথা বলার পর বলতে পারবো।’
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এন. এম. রবিউল আউয়াল চৌধুরী আগ্রহ নিয়ে বলেন, ‘বিভাগের শিক্ষার্থী থাকাকালীন সব সময়ই সে একটু ভিন্নধর্মী চিন্তা করত। তারই একটা প্রতিফলন বলা যায় এটা। আর বঙ্গবন্ধু চিন্তাভাবনা আমরা যতবেশি মানুষকে জানাতে পারবো ততোই কল্যাণ। আর এটা যেহেতু সে তাদের ভাষায় করেছে সেহেতু তাদের জাতিগোষ্ঠীর জন্যও বঙ্গবন্ধুকে জানতে সহজ হবে। আর প্রয়োজন হলে বিভাগ কিংবা ডিন অফিস থেকে সহায়তা করবো।’
ককবরক ভাষা সম্পর্কে জানা যায়, কক শব্দের অর্থ মানুষ আর বরক অর্থ ভাষা। অর্থাৎ শাব্দিক অর্থ দাঁড়ায় মানুষের ভাষা। ব্যবহারিক অর্থে ত্রিপুরাদের ভাষা। চিনের ইয়াংসি ও হোয়াংহো নদীর উৎসস্থলে জন্ম নেওয়া এ ভাষায় বর্তমানে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ৩৬টি গোত্রের ভাবপ্রকাশের মাধ্যম। এছাড়াও গারো, কোচ, হাজং ইত্যাদি জনগোষ্ঠীর ভাষাও একই শ্রেণিভুক্ত বলে জানা যায়।