দেশের বিভিন্ন বন্দরে (পণ্য আমদানিতে) ভ্যাট হার ভিন্ন হওয়ায় আমদানিকারকদের পণ্যের দাম নির্ধারণ করতে গিয়ে প্রতিযোগিতায় পড়তে হচ্ছে। এছাড়া স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় পণ্য আমদানি করতে উচ্চহারে ভ্যাট দিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীরা পণ্য হাতে পৌঁছে দেওয়ার চুক্তি করে তা আমদানি করছেন। এতে খরচ কিছুটা কম হলেও অবৈধভাবে আমদানি বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে নকল পণ্য।
বুধবার (১২ অক্টোবর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে টিসিবি ভবনে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা। কসমেটিকস পণ্য আমদানিকারক, বাজারজাতকারী ও ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
মতবিনিময় সভায় মিনাবাজার, মোস্তফা মার্ট, ঢালি সুপার শপ, আল হেরামাইন সহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন। এসময় ব্যবসায়ীরা বলেন, আমদানি করা পণ্যে ভ্যাট বেশি দিতে হয় বলে দাম বেশি নির্ধারণ করতে হয়। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নকল পণ্য। এসব নকল পণ্যের দাম কম হওয়ায় আসল পণ্য বাজারে টিকে থাকতে পারছে না।
তারা বলেন, আমরা বৈধ পণ্য বিক্রি করছি। আমরা পণ্যের মান নির্ধারণ করেই বিক্রি করছি। তবে বিভিন্ন বন্দরে ভ্যাট হার ভিন্ন হওয়ায় আমদানিকারকদের দাম নির্ধারণ করতে গিয়ে প্রতিযোগিতায় পড়তে হচ্ছে। এছাড়া স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় পণ্য আমদানি করতে উচ্চ হারে ভ্যাট দিতে হচ্ছে। নানা ঝামেলায়ও পড়তে হয়। এতে পণ্যের দাম বেশি হয়ে যায়। ফলে পণ্য হাতে পৌঁছে দিতে বিদেশি রপ্তানিকারকদের সঙ্গে চুক্তি করে পণ্য আমদানি করেন অনেকে। এতে পণ্যের খরচ কম হয়। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা, অবৈধভাবে আমদানি করা ও নকল পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে (বৈধভাবে আমদানি পণ্যের) টিকে থাকতে হচ্ছে।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রতিটি পণ্যে আমদানিকারকের বারকোড দেওয়ার দাবি জানান তারা। বারকোডে পণ্যের আমদানিকারক, মানসহ সবকিছু পাওয়া যাবে বলে অভিমত দেন বক্তারা।
রাজধানীর মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আজমল হোসেন বাবু বলেন, দাম নির্ধারণ এক করতে হবে। একেক বন্দরে ভ্যাট একেক হলে দাম নির্ধারণ ভিন্ন ভিন্ন হয়। এতে আমদানিকারকরা দাম নির্ধারণ করলে (দাম বেশি হওয়ায়) সেই পণ্য বিক্রি হবে না।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) প্রতিনিধি কাজী আব্দুল হান্নান বলেন, ভোক্তাদের অধিকারের পাশাপাশি আমরা আমদানিকারক এবং ব্যবসায়ীদের অধিকার নিয়েও চিন্তা করি। তাই অনেক সময় পণ্যের নাম উল্লেখ করি না আমরা, যাতে ব্যবসায়ীরা তাদের অর্জিত সুনাম হারিয়ে না ফেলেন। তবে আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের মাথায় রাখতে হবে, দেশের এবং জনগণের ক্ষতি হয় এমন পণ্য বাজারে ছাড়া যাবে না। এটা ব্যবসায়ীদেরকেই নিশ্চিত করতে হবে।
মতবিনিময় সভায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, আমরা একদিনেই সব পরিবর্তন করতে পারবো না। নকল পণ্য- বিদেশে কল্পনাই করা যায় না। আমরা সেটা দ্রুত সময়ে কীভাবে সমাধান করা যায় চেষ্টা করবো।
তিনি বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমকে ম্যানেজ করা হয়। সবকিছু কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেটা দেখতে হবে। ভ্যাট কমিয়ে আমদানি বাড়াতে হবে। ডিউটি ফাঁকি দিয়ে আমদানি করা যাবে না।
অবৈধভাবে আমদানি করার মানসিকতা পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, এটা কখনো ব্যবসায়িক চিন্তা হতে পারে না। আজকের আলোচনার একটি রিপোর্ট সরকারকে দেবো। সেই অনুযায়ী সামনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমদানিকারক ছাড়া যেহেতু কোনো পণ্য আমদানি করা যায় না তাই যিনি আমদানিকারক তার তথ্য থাকতে হবে।
আমাদের দেশে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম নির্ধারণ করেন জানিয়ে তিনি বলেন, পণ্যে উৎপাদনের তারিখ ও তার মেয়াদ থাকতে হবে। বিএসটিআই’র মাধ্যমে পণ্যের মান অবশ্যই করতে হবে। পণ্যের দাম নির্ধারণ করতে হবে এবং এটা করবেন আমদানিকারকরা। কিন্তু আমাদের এখানে যিনি বিক্রি করেন তিনিই দাম নির্ধারণ করেন। আমাদের অভিযানে দেখা যাচ্ছে এসব মানা হচ্ছে না।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের সংশোধনের কথা জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, বর্তমানে যে আইন রয়েছে সেটি ২০০৯ সালের। আমরা নতুন আইনের খসড়া সরকারকে পাঠিয়েছি। কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে সেটা ঠিক হলে নতুন আইন আসবে।
মতবিনিময় সভায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার, ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল, প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম ও সহকারী পরিচালক মো. শাহ আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।